
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ সোমবার বলেছেন, অব্যাহত আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে ঐতিহাসিক “জুলাই সনদ” চূড়ান্ত প্রক্রিয়ায় পৌঁছাতে যাচ্ছে কমিশন। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় পর্যায়ের ২০তম দিনের বৈঠকের শুরুতে তিনি এ তথ্য জানান এবং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানান।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের সকল অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল ও প্রতিনিধিদের সহযোগিতায়, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই আমরা একটি চূড়ান্ত দলিল তৈরি করতে সক্ষম হবো বলে আশা রাখি। এই দলিলটি হবে ভবিষ্যত বাংলাদেশের রাজনীতির একটি মাইলফলক, যেখানে রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক সংস্কার ও পরিবর্তনের বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বারবার আলোচনার মাধ্যমে এই সনদে পরিবর্তন ও সংস্কার করেছি, যাতে সকল পক্ষ একটি নির্দিষ্ট জায়গায় একমত হতে পারে। এখন পর্যন্ত মোট ১২টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমরা একমত পৌঁছেছি, যদিও দুটি বিষয়ে কিছুটা মতবিরোধ রয়েছে, তবুও পারস্পরিক ছাড়পত্র দিয়ে ঐকমত্য গড়ে উঠেছে।’
অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, ‘রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক সংস্কার যে কতটা জরুরি, সেটা বুঝে আমরা সকল গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা চালিয়েছি এবং সেগুলোকে ন্যূনতম পরিমাণে দলিলভুক্ত করার চেষ্টা করছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমরা সংগ্রাম করেছি এবং সেটি এই সনদে একটি কাঠামোবদ্ধ রূপ পাবে, যা ভবিষ্যতে দেশের জন্য অপরাধমূলক রাজনৈতিক অস্থিরতার পুনরাবৃত্তি রোধ করবে।’
তিনি আরও জানান, ‘আলোচনার এই প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলের মতামত গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জন করা হয়েছে। এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল হবে, যা জাতির সামনে উপস্থাপন করে সর্বস্তরের মানুষের স্বাক্ষর সাপেক্ষে চূড়ান্ত করা হবে।’
অধ্যাপক আলী রীয়াজ আশা প্রকাশ করেন, যারা আগামী দিনে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন, তারা এই সনদে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলোকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন এবং দেশের জন্য এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
আজকের বৈঠকের মধ্যে রয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহা হিসাব নিয়ন্ত্রণ ও নিরীক্ষক, ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান, এবং জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয়গুলো। এছাড়া কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতীয় সনদের খসড়া পাঠানো হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দীর্ঘদিন ধরেই দেশের রাজনীতির স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য একটি সুস্পষ্ট কাঠামো তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে আসছে। জুলাই সনদকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করে বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটি বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য একটি যুগান্তকারী দলিল হয়ে উঠতে পারে, যা রাজনৈতিক সংস্কার ও জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি গড়ে দেবে।
কমিশনের এই উদ্যোগকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, দেশের সব রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত অংশগ্রহণে তৈরি এই দলিল ভবিষ্যতে রাজনীতির ধারা বদলে দিতে সক্ষম হবে, পাশাপাশি রাজনীতির মধ্যে সুষ্ঠু ও জবাবদিহিমূলক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাবে।
তবে, দলগুলোর মধ্যে যে দুটি বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে, তা কীভাবে সমাধান করা হবে এবং ঐ সনদে অন্তর্ভুক্ত হবে কি না, সেটি আগামী দুই-তিন দিনের আলোচনার মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে।
উল্লেখ্য, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার গঠন করেছে। এটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত একটি বিশেষ কমিটি, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সংকট ও দ্বন্দ্ব সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজের মতে, ‘এই জুলাই সনদ দেশের জন্য একটি রোডম্যাপ হিসেবে কাজ করবে, যেখানে ভবিষ্যত বাংলাদেশের রাজনীতি পরিচালনার নিয়ম, পদ্ধতি ও নীতিমালা নির্ধারণ করা হবে। এর ফলে নতুন প্রজন্মের নেতারা একটি সুসংহত ও দায়িত্বশীল রাজনৈতিক পরিবেশে কাজ করতে পারবে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভা চলমান রয়েছে এবং আগামী দুই-একদিনের মধ্যে একটি চূড়ান্ত সনদ উপস্থাপন ও স্বাক্ষরের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান আলোচনার ধারা অব্যাহত থাকবে। দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এটি একটি সুষ্ঠু, মৈত্রীপূর্ণ ও দায়িত্বশীল রাজনৈতিক কাঠামোর সূচনা হিসেবে বিবেচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ