
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকার উত্তরা এলাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের মর্মান্তিক ঘটনার সরকারি হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীসহ মোট ২৯ জন নিহত হয়েছেন এবং ৬৯ জন আহত রয়েছেন। আহতদের মধ্যে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও বিভিন্ন কর্মী রয়েছেন। গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ফয়েজ আহম্মদ সংবাদমাধ্যমকে বিস্তারিত তথ্য জানান।
নিহতদের মধ্যে ১১ জনের লাশ জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে, ১৫ জন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ), একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, একজন লুবানা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে এবং একজন ইউনাইটেড হাসপাতালে দাফন বা হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া এখনও পরিচয় মেলেনি এমন ছয়জনের লাশ মর্গে রয়েছে।
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে মৃতদের মধ্যে ১৪ থেকে ১৩ বছর বয়সি শিশু শিক্ষার্থীরা রয়েছে, যেমন তানভীর (১৪), আদনান ফাইয়াজ (১৪), এবি শামীম (১৪), আরিয়ান (১৩) ও নাজিয়া (১৩)। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিহতদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন বয়সী শিক্ষার্থী ও শিক্ষিকা, তাদের নামও উল্লিখিত হয়েছে। হাসপাতাল থেকে নিহতদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে বিধ্বস্ত বিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের লাশ আগেই দাফন করা হয়েছে।
চিকিৎসাধীন ৬৯ জনের মধ্যে পাঁচজন শিক্ষক, ৪১ জন শিক্ষার্থী, একজন স্কুল কর্মচারী, একজন ফায়ার ফাইটার, একজন পুলিশ সদস্য, ১৪ জন সেনাসদস্য, একজন আয়া, একজন ইলেকট্রিশিয়ান এবং আরও চারজন রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ৪৪ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ২১ জন এবং অন্যান্য হাসপাতালে বাকি রয়েছেন।
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে আটজন বর্তমানে চিকিৎসাধীন, যার মধ্যে রয়েছে ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থী এবং শিক্ষিকা মাহফুজা খাতুন (৪৫)। অন্যান্য ওয়ার্ড ও ইউনিটে আরও অনেকে ভর্তি রয়েছেন। সিএমএইচের বার্ন আইসিইউতে চারজন আছেন, যাদের মধ্যে তিনজন শিক্ষার্থী ও একজন শিক্ষক।
অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ১১ বছর বয়সী জান্নাতুল মাওয়া, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৪ বছর বয়সী মেহেরুন্নেসা এবং অন্যান্য হাসপাতালে আরও আহতরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
দুর্ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যক্রম শুরু করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনার হতাহতের সঠিক তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সভাপতি করা হয়েছে স্কুলের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলমকে, এবং সদস্য হিসেবে রয়েছেন উপাধ্যক্ষ (প্রশাসন) খাদিজা আক্তার, প্রধান শিক্ষিকা লুৎফুন্নেসা লোপা, কো-অর্ডিনেটর মনিরুজ্জামান মোল্লা ও অভিভাবকদের প্রতিনিধি তিনজন। কমিটি আগামী তিন দিনের মধ্যে পূর্ণ প্রতিবেদন সরকারের কাছে দাখিল করবে।
অন্যদিকে, যারা এখনো নিখোঁজ রয়েছে তাদের তথ্য ও খবর জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করার জন্য।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে এই বিমান দুর্ঘটনা দেশের ইতিহাসে এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা দেশের শিক্ষা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গভীর চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আহত ও নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে সকল পক্ষ দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিতের দাবি জানানো হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ