
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আবারও উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে, পাশাপাশি নতুন করে ১৫৯ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শুক্রবার (২৭ জুন) সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো নিয়মিত প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সময়কে বিবেচনায় নিয়ে প্রকাশিত এই তথ্যচিত্রে দেখা যাচ্ছে, বরিশাল বিভাগে পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে খারাপ। শুধুমাত্র বরিশালেই নতুন ভর্তি হয়েছেন ১০৭ জন রোগী, যা সারাদেশে মোট আক্রান্তের প্রায় ৬৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের একজনের বয়স ৭২ বছর এবং অপরজনের বয়স ৫০ বছর। দুজনই পুরুষ। এ নিয়ে ২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন মোট ৪০ জন, যাদের মধ্যে ২২ জন পুরুষ এবং ১৮ জন নারী।
ডেঙ্গুতে মৃত্যুর এই সংখ্যা বিশেষজ্ঞদের কাছে গভীর উদ্বেগের বিষয়। কারণ চলতি বছর বর্ষা মৌসুম পুরোপুরি শুরু হওয়ার আগেই রোগের প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। এখনই যদি নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, বর্ষাকালে এটি মারাত্মক রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকেরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে দেখা যায়, একদিনে ১৫৯ জন নতুন রোগীর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভর্তি হয়েছেন বরিশালের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে।
-
বরিশাল বিভাগ: ১০৭ জন
-
ঢাকা মহানগর: ২১ জন
-
ঢাকা বিভাগ (সিটি করপোরেশন বাদে): ১২ জন
-
চট্টগ্রাম বিভাগ: ১১ জন
-
রাজশাহী বিভাগ: ৬ জন
-
সিলেট বিভাগ: ২ জন
এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, বরিশাল এখন ডেঙ্গু সংক্রমণের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠছে। স্থানীয়ভাবে মশার বিস্তার, অপরিকল্পিত নগরায়ন, জলাবদ্ধতা এবং পরিচ্ছন্নতার অভাবকে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৯ হাজার ২২২ জন। তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক। এছাড়া রোগীর বয়সভিত্তিক বৈচিত্র্যও লক্ষ্য করা যাচ্ছে—বয়সভেদে ডেঙ্গুর জটিলতা বাড়ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু ভাইরাসের মধ্যে DENV-2 এবং DENV-3 ধরনগুলোর আধিক্য বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এগুলো সাধারণত রোগীকে জটিল অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে, বিশেষ করে যদি কেউ আগেও একবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
চিকিৎসকেরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে রোগীরা সময়মতো হাসপাতালে না আসায় রক্তে প্লাটিলেট দ্রুত কমে গিয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে চিঠি দিয়ে শহরাঞ্চলে মশা নিধন কর্মসূচি জোরদার করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি নাগরিকদের ব্যক্তিগত পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে কেবল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা সিটি করপোরেশন একা কিছু করতে পারবে না, যদি না সাধারণ মানুষ নিজেদের ঘরের আঙিনা পরিষ্কার রাখে এবং পানি জমতে না দেয়।
ডেঙ্গুর বিস্তার ঠেকাতে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে—
-
নির্মাণাধীন ভবন
-
বন্ধ ফ্ল্যাট ও ভবন
-
ফুলের টব, টায়ার, ফ্রিজের পেছনের ট্রে ইত্যাদি জায়গায়
-
স্কুল, কলেজ ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের আঙিনা
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এখনই ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে—এমনটাই মনে করছেন চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বরিশাল থেকে শুরু করে দেশের অন্যান্য বিভাগেও নজরদারি ও প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি বাড়াতে হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ