
ছবি: সংগৃহীত
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুক্রবার (২৭ জুন) সকালে উড্ডয়নের কিছু সময় পরেই ফিরে আসে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সিঙ্গাপুরগামী একটি ফ্লাইট। ভৌতভাবে এটি ছিল বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের একটি উড়োজাহাজ, যার ফ্লাইট নম্বর ছিল বিজি ৫৮৪ (BG 584)। ঘটনাটি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘটে, যা প্রথমে যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়ালেও পরবর্তীতে পরিস্থিতি নিরাপদে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
বিমানটি আকাশে ওঠার পর মাত্র ২ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছাতেই পাইলট জরুরি ভিত্তিতে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ হিসেবে শুরুতে বলা হয়, উড়োজাহাজটিতে কোনো এক ধরনের কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়, যার ফলে নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রেখেই পাইলট ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। বিমানটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে।
ঘটনার পর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে রানওয়ের একটি পূর্ণাঙ্গ পরিদর্শন চালায়। তারা দেখতে চেয়েছিল—বিমানটি উড্ডয়নের সময় কোনো পাখি, ধাতব বস্তু কিংবা অন্য কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত উপাদানের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল কি না। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তে এমন কোনো বস্তু বা পাখির চিহ্ন পাওয়া যায়নি, যা সরাসরি সংঘর্ষের কারণ হতে পারে বলে নিশ্চিত করা যায়।
তবে এরপরই শুরু হয় নতুন এক জল্পনা। বিমান কর্তৃপক্ষ জানায়, ফেরার পর উড়োজাহাজটির ইঞ্জিন কাউলিং (ইঞ্জিন কভারের বাইরের অংশ) পরীক্ষা করে সেখানে রক্তের দাগ পাওয়া গেছে। যা দেখে তারা ধারণা করছেন, সম্ভবত উড্ডয়নের সময় কোনো পাখির সঙ্গে বিমানের সংঘর্ষ হয়েছে, যাকে বলা হয় ‘বার্ড স্ট্রাইক’। তবে এটি এত দ্রুত ঘটে যে কন্ট্রোল টাওয়ার বা গ্রাউন্ড রাডারে ধরা পড়েনি, এবং রানওয়ের আশপাশেও পাখির মৃতদেহ কিংবা পালক পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনার সময় বিমানে কতজন যাত্রী ছিলেন, তা স্পষ্ট না করলেও পরে বিমান কর্তৃপক্ষ জানায়, একই নম্বরের একটি বিকল্প ফ্লাইট—BG 584—দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। নতুন ফ্লাইটে মোট ১৫৪ জন যাত্রী ছিলেন। তাদের সিঙ্গাপুরে পৌঁছাতে যেন দেরি না হয়, সে জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ এ ঘটনার প্রেক্ষিতে জানায়, “আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে যাত্রীদের নিরাপত্তা। যে কোনো ধরনের সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে আমাদের পাইলট ও প্রকৌশল বিভাগ সবসময় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকে। আজকের ঘটনা তারই একটি নিদর্শন।”
উল্লেখ্য, ‘বার্ড স্ট্রাইক’ বা পাখির সঙ্গে উড়োজাহাজের সংঘর্ষ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোতে একটি বড় ধরনের ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যেটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মাঝে অবস্থিত, সেখানে রানওয়ের আশপাশে উড়ন্ত পাখির উপস্থিতি একটি সাধারণ দৃশ্য।
এটি প্রথমবার নয়, এর আগেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একাধিক ফ্লাইট উড্ডয়নের সময় বার্ড স্ট্রাইকের শিকার হয়েছে। কখনো এটি যান্ত্রিক ক্ষতি করেছে, আবার কখনো উড়োজাহাজ জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়েছে। তবে আজকের ঘটনায় যে দ্রুততা ও সচেতনতার সঙ্গে পাইলট ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ করেছেন, তা অনেকের কাছে প্রশংসাযোগ্য মনে হয়েছে।
বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা উড়োজাহাজটির ব্ল্যাক বক্সসহ অন্যান্য রেকর্ড পর্যালোচনা করে নিশ্চিত করবে যে প্রকৃতপক্ষে ঘটনা কী ছিল এবং কীভাবে ভবিষ্যতে এমন ঝুঁকি আরও কমিয়ে আনা যায়।
সতর্কতা ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেল সিঙ্গাপুরগামী এই ফ্লাইট। পাইলটের দক্ষতা, যান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার নির্ভরযোগ্যতা এবং দ্রুত বিকল্প ফ্লাইটের ব্যবস্থা যাত্রীদের ভোগান্তি কমিয়ে দিয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ