
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে দ্রুততম গতিতে জনপ্রিয়তা পাওয়া মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ প্রতিনিয়তই নতুন নতুন ফিচার চালু করে ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা উন্নত করার পাশাপাশি তাদের গোপনীয়তা রক্ষায়ও বড় ভূমিকা রাখছে। সামাজিক যোগাযোগের এই শক্তিশালী মাধ্যমটি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত মেসেজ আদান-প্রদানেই নয়, পেশাগত কাজেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। অফিসের মিটিং, ফাইল শেয়ারিং, জরুরি আলোচনাসহ নানা কাজে বর্তমানে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা ও তথ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোয়াটসঅ্যাপের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে পরিণত হয়েছে।
বর্তমানে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীরা একাধিক গ্রুপে যুক্ত থাকেন—কর্মস্থলের কলিগ, বন্ধু, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা পেশাজীবী গ্রুপে নিয়মিত যোগাযোগ চালিয়ে যান। এসব চ্যাটের অনেক কিছুই অত্যন্ত সংবেদনশীল বা ব্যক্তিগত হয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এত গ্রুপ ও ব্যক্তিগত আলাপচারিতার নিরাপত্তা কতটা বজায় রাখা সম্ভব?
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে এবং ব্যবহারকারীদের আস্থা আরও বাড়াতে হোয়াটসঅ্যাপ সম্প্রতি চালু করেছে নতুন এক প্রচারণা—‘Not Even WhatsApp’ বা বাংলায় বলা যেতে পারে, ‘এমনকি হোয়াটসঅ্যাপও না’। এই প্রচারণার মাধ্যমে তারা স্পষ্টভাবে বোঝাতে চেয়েছে, ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত চ্যাট বা কথোপকথন এতটাই সুরক্ষিত যে এমনকি হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ নিজেরাও তা দেখতে বা জানতে পারে না।
একটি প্রোমোশনাল ভিডিওতে দেখানো হয়েছে, ব্যবহারকারীরা কীভাবে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করছেন—চ্যাট করছেন, ভিডিও কলে ব্যক্তিগত কথা বলছেন, এমনকি ব্যবসায়িক গোপনীয় কথাবার্তাও চালাচ্ছেন। অথচ এই সমস্ত তথ্য এমনভাবেই এনক্রিপ্টেড বা সুরক্ষিত থাকে যে হোয়াটসঅ্যাপের নিজস্ব সার্ভারেও তা খোলা বা পড়া সম্ভব নয়। এই ‘এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন’ ব্যবস্থাই হোয়াটসঅ্যাপের মূল শক্তি।
এই প্রচারণার অংশ হিসেবেই আরও শক্তিশালী প্রাইভেসি ফিচার যুক্ত করেছে হোয়াটসঅ্যাপ, যার নাম ‘Advanced Chat Privacy’। এটি একটি নতুন এবং আপডেটেড ফিচার, যা ব্যবহারকারীদের চ্যাট এক্সপোর্ট অপশন বন্ধ করে দেয়। অর্থাৎ কেউ আর কোনো চ্যাট বা গ্রুপ কথোপকথন কপি করে ইমেইল বা অন্য মাধ্যমে অন্যকে পাঠাতে পারবে না। ফলে ব্যবহারকারীর চ্যাট ফাঁস হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে।
এই ফিচারটি চালু করতে হলে ব্যবহারকারীদের অবশ্যই হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপের সর্বশেষ ভার্সনে আপডেট থাকতে হবে। সেটিংসে গিয়ে ‘Privacy’ অপশনে প্রবেশ করলেই ‘Advanced Chat Privacy’ নামের একটি নতুন অপশন দেখতে পাবেন। সেটি অন করলেই আপনার সব ব্যক্তিগত ও গ্রুপ চ্যাট আরও বেশি সুরক্ষিত হয়ে যাবে।
তবে এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার করে রাখা দরকার—এই ফিচার চালু করলে চ্যাট এক্সপোর্ট করা গেলেও, স্ক্রিনশট নেওয়ার কোনো বাধা নেই। অর্থাৎ চ্যাটের স্ক্রিনশট আগের মতোই নেওয়া যাবে, যার মাধ্যমে কেউ চাইলে এখনও তথ্য ছড়িয়ে দিতে পারে। তবে এক্সপোর্ট অপশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তথ্যের ব্যাপক ও তাত্ক্ষণিক ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অনেক কমে যাবে।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই ‘Advanced Chat Privacy’ ফিচার সম্পূর্ণ কার্যকর করতে হলে শুধু আপনার হোয়াটসঅ্যাপই আপডেট থাকলেই হবে না, যার সঙ্গে আপনি কথা বলছেন, তার হোয়াটসঅ্যাপও লেটেস্ট ভার্সনে আপডেট থাকতে হবে। দু’পক্ষই আপডেটেড থাকলেই ফিচারটি সঠিকভাবে কাজ করবে।
হোয়াটসঅ্যাপের দাবি, এই ফিচারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের তথ্য-নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত কথোপকথনের গোপনীয়তা আরও একধাপ উন্নত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন তাদের বড় দায়িত্ব।
এই নতুন পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়াবে এবং তথ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। প্রযুক্তি যতই এগিয়ে যাক না কেন, গোপনীয়তা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার গুরুত্ব কখনোই কমে না—এই বার্তাই যেন আরও একবার তুলে ধরল হোয়াটসঅ্যাপ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ