
ছবি: সংগৃহীত
অনলাইন অনুসন্ধানের অভিজ্ঞতাকে সম্পূর্ণ নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে গুগল এবার আনছে ‘ওয়েব গাইড’ নামের একটি আধুনিক এআইচালিত ফিচার। ব্যবহারকারীদের দ্রুত, নির্ভরযোগ্য এবং সুনির্দিষ্ট তথ্য সরবরাহে সক্ষম এই সিস্টেমটি গুগলের নিজস্ব জেমিনি (Gemini) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেলের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত।
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে গুগল প্রতিনিয়ত ব্যবহারকারীদের চাহিদা ও প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে তাল মেলাতে নানান পরিবর্তন আনছে। সেই ধারাবাহিকতায় ‘ওয়েব গাইড’ হচ্ছে এমন একটি পদক্ষেপ, যা সার্চ ইঞ্জিনকে শুধু আরও বেশি কার্যকরই করবে না, বরং সার্চ করা বিষয়গুলোর ভিন্নমাত্রিক বিশ্লেষণ ও উপস্থাপনাকেও সহজ করে তুলবে।
গুগলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ব্যবহারকারীরা যখন ‘how to care for a mango tree’ বা ‘আম গাছের যত্ন কিভাবে নিতে হয়’—এমন কোনো প্রশ্ন লিখে সার্চ করবেন, তখন এই ‘ওয়েব গাইড’ সিস্টেম প্রথমেই প্রাসঙ্গিক দুটি প্রধান ওয়েবসাইটের লিঙ্ক দেখাবে। এর পরে গুগলের জেমিনি এআই বিশ্লেষণ করে একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সারাংশ উপস্থাপন করবে, যাতে প্রশ্নের সরাসরি ও নির্ভরযোগ্য উত্তর পাওয়া যায়। এরপর সবচেয়ে চমকপ্রদ অংশটি হলো—বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ক্যাটাগরিতে সাজানো তথ্য।
এই পদ্ধতিতে ফলাফলগুলো থাকবে নির্দিষ্ট থিম বা বিভাগ অনুযায়ী আলাদা করা। যেমন: পরিচর্যার ধাপ, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, রোগ প্রতিরোধ, মৌসুমি যত্ন ইত্যাদি ভাগে ভাগ করে সাজানো তথ্য উপস্থাপন করবে এআই। ফলে একজন ব্যবহারকারী শুধু মূল সারাংশই নয়, বরং পুরো বিষয় সম্পর্কে ধাপে ধাপে পরিষ্কার ধারণা পেতে পারবেন।
গুগলের মতে, যারা নির্দিষ্ট প্রশ্নের নির্ভুল উত্তর জানতে চান বা কোনো বিষয়ে বিস্তারিত জানার প্রয়োজন হয় না—তারা সরাসরি এআই সারাংশ থেকেই উপকৃত হতে পারবেন। আবার যারা পুরো বিষয়ের গভীরে যেতে চান, তারা ক্যাটাগরি অনুযায়ী সাজানো তথ্যগুলো দেখতে পারবেন এবং প্রয়োজনে নির্দিষ্ট লিংকে ক্লিক করে বিস্তারিত পড়তেও পারবেন।
এটি শুধু সময় সাশ্রয়ই করবে না, বরং একাধিক অপ্রয়োজনীয় লিংকে ক্লিক করে বিভ্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমিয়ে দেবে। বিশেষ করে তরুণ ব্যবহারকারীদের জন্য এটি হবে এক ধরনের ‘ডিজিটাল নেভিগেশন সাপোর্ট’।
গুগল জানিয়েছে, এই মুহূর্তে ‘ওয়েব গাইড’ ফিচারটি পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। গুগল সার্চ ল্যাবসের মাধ্যমে আগ্রহীরা এটি চালু করে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে যাদের পছন্দ পুরোনো ধাঁচের সার্চ রেজাল্ট, তারা চাইলে সেই পদ্ধতিই ব্যবহার করতে পারবেন।
তবে গুগলের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভবিষ্যতে এই ‘ওয়েব গাইড’ ফিচারটি ‘AI’ ট্যাব হিসেবে সার্চ রেজাল্টে স্বতন্ত্রভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সেক্ষেত্রে ব্যবহারকারী চাইলে এক ক্লিকেই এআই দ্বারা সংক্ষিপ্ত সারাংশ ও সাজানো তথ্য পেতে পারবেন।
গুগলের নতুন এই পদক্ষেপের অন্যতম লক্ষ্য হলো ভুল তথ্য ছড়ানো বা বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট থেকে ব্যবহারকারীদের রক্ষা করা। সার্চের সময় একসঙ্গে অসংখ্য লিংক দেখে অনেকে ঠিক তথ্য খুঁজে বের করতে হিমশিম খান। অনেক সময় ভুল ওয়েবসাইট বা অপেশাদার ব্লগ থেকে নেওয়া তথ্য বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
কিন্তু ‘ওয়েব গাইড’ ফিচারের মাধ্যমে গুগল চেষ্টা করছে নির্ভরযোগ্য উৎস, প্রাসঙ্গিক তথ্য এবং AI বিশ্লেষণ মিলিয়ে এমন একটি মিশ্র ফরম্যাট তৈরি করতে, যা ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে সহজ, নির্ভুল এবং কার্যকর করবে।
বলা যায়, গুগল সার্চ ইঞ্জিনে এই নতুন এআই ফিচার চালুর মাধ্যমে একপ্রকার যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিচ্ছে। এটি শুধু কনটেন্ট উপস্থাপনের ধরনই বদলাবে না, বরং ব্যবহারকারীর চিন্তা করার ধরনকেও প্রভাবিত করবে। তথ্য খোঁজার পদ্ধতি হবে আরো সংগঠিত, সময় বাঁচানো এবং বিশ্বাসযোগ্যতার দিক থেকে উন্নত।
অবশ্যই এ প্রযুক্তি এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি, এবং পরীক্ষামূলক পর্যায়ের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী এতে আরও কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। তবুও এটুকু বলা যায়—‘ওয়েব গাইড’ গুগলের ভবিষ্যত অনুসন্ধান প্রযুক্তির এক শক্তিশালী পূর্বাভাস।
বাংলাবার্তা/এমএইচ