
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশে বড় রকমের স্বস্তি আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তিন দিনের বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সংলাপের প্রথম দিনেই বাংলাদেশ পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সবুজ সংকেত’। এতে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক হ্রাসের আশ্বাস মিলেছে। চলমান বৈঠকে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান ওয়াশিংটন ডিসি থেকে হোয়াটসঅ্যাপে সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
বাণিজ্য সচিব জানান, মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের (ইউএসটিআর) সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। আলোচনায় মার্কিন কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, বাংলাদেশের পণ্যের ওপর আরোপিত উচ্চহারে পালটা শুল্ক কমানো হবে। তিনি বলেন, “আমাদের শুল্ক যথেষ্ট পরিমাণে কমবে বলে ধারণা করছি। তবে ঠিক কতটা কমবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। আমরা এখনও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।”
তিনি আরও জানান, “বুধবার ও বৃহস্পতিবার আমাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক রয়েছে। সেগুলোতে আরও বিস্তারিত স্পষ্ট হবে। তবে এতটুকু বলতে পারি, বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক কিছু হতে যাচ্ছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে শুরু হয় বৈঠক, যা চলে বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা ৩০ মিনিট)। তিন দিনের এই সংলাপের প্রথম দিনের আলোচনা শেষে একধরনের আশাবাদী বার্তা নিয়ে বৈঠক থেকে বের হন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশের পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী। এছাড়া ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারাও ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের পণ্যে পালটা ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল, যা আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে বড় ধাক্কা হয়ে আসতে পারে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক, চামড়া, হস্তশিল্প ও কৃষিভিত্তিক পণ্যের ক্ষেত্রে। আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যে গড়ে ১৫.৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপিত ছিল। গত কয়েক বছরে তা বেড়ে ২২ থেকে ২৩ শতাংশে পৌঁছেছে, বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন বাণিজ্যনীতি চালুর পর।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন পালটা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটেই শুরু হয় এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে বাংলাদেশ যেন তাদের পণ্যের আমদানি বাড়ায় এবং আমদানি শুল্ক কিছুটা হ্রাস করে। সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েই বাংলাদেশ পালটা শুল্ক কমানোর অনুরোধ জানায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আলোচনা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক কমায়, তাহলে শুধু তৈরি পোশাক খাতই নয়, চামড়া, কৃষি এবং হস্তশিল্পসহ অন্যান্য রপ্তানি খাতেও বড় ধরণের উন্নতি আসবে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “এই বৈঠকের সফলতা নির্ভর করছে পরবর্তী দুই দিনের আলোচনার ওপর। তবে প্রথম দিনেই এমন ‘সবুজ সংকেত’ পাওয়া নিঃসন্দেহে বড় অর্জন।”
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই আলোচনার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল আশা করছে, আলোচনার শেষে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হবে, যেখানে শুল্ক কাঠামো এবং বাজার প্রবেশাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা থাকতে পারে।
এই আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান যেমন শক্তিশালী হবে, তেমনি রপ্তানি আয়ে নতুন গতি আসবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম রপ্তানিকেন্দ্রিক বাণিজ্য অংশীদার হতে পারে—এই বার্তাও আলোচনা থেকে উঠে আসছে। এখন শুধু অপেক্ষা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও ঘোষণা কবে আসে, সেটি দেখার।
বাংলাবার্তা/এমএইচ