
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে এখন থেকে স্টারলিংকের সেবা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার খবর দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। মঙ্গলবার (২০ মে) সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্টারলিংক যাত্রা শুরু করেছে—এমন তথ্য তিনি জানান, সোমবার বিকালে স্টারলিংকের পক্ষ থেকে তাকে ফোনে জানানো হয় এবং মঙ্গলবার সকালে তাদের এক্স হ্যান্ডেল থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে নতুন এক যুগের সূচনা হলো, যেখানে স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের মাধ্যমে দ্রুতগতির ও উচ্চমানের ইন্টারনেট সেবা পাওয়া সম্ভব হবে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, স্টারলিংক তাদের সেবা শুরুতে দুই ধরনের প্যাকেজ নিয়ে আসছে। প্রথমটি হচ্ছে ‘স্টারলিংক রেসিডেন্স’ এবং দ্বিতীয়টি ‘রেসিডেন্স লাইট’। এই দুই প্যাকেজের মাসিক খরচ যথাক্রমে ৬০০০ টাকা ও ৪২০০ টাকা। তবে এই সেবাটি গ্রাহকদের ব্যবহার করার জন্য এককালীন সেটআপ চার্জ দিতে হবে, যা ৪৭ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে গ্রাহকরা বাড়ির মধ্যে স্টারলিংক সিস্টেম সেটআপ করতে পারবেন এবং উচ্চ গতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।
সর্বোপরি ফয়েজ আহমদ জানান, এখানে কোন ধরনের স্পিড সীমাবদ্ধতা বা ডাটা লিমিট নেই। গ্রাহকরা ৩০০ এমবিপিএস পর্যন্ত গতিতে আনলিমিটেড ডেটা ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন, যা বাংলাদেশের বর্তমান ইন্টারনেট পরিষেবার তুলনায় একেবারেই ভিন্ন মাত্রার সুবিধা। তিনি আরও বলেন, আজ থেকেই বাংলাদেশি গ্রাহকরা অনলাইনে অর্ডার দিতে পারবেন এবং আগামী ৯০ দিনের মধ্যে সেবা চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এই যাত্রার পেছনে যারা কাজ করেছেন, তাদের সকলকে প্রধান উপদেষ্টা অভিনন্দন জানিয়েছেন।
ফয়েজ আহমদ এই নতুন সেবা প্রসঙ্গে বলেন, যদিও খরচ কিছুটা বেশি, তবুও এটি বাংলাদেশের প্রিমিয়াম গ্রাহকদের জন্য একটি উচ্চমানের, দ্রুতগতির ও টেকসই ইন্টারনেট সেবার বিকল্প তৈরি করবে। বিশেষ করে যারা উচ্চ গতি এবং নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেটের প্রয়োজন তাদের জন্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।
এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে এখনও অনেক এলাকা আছে যেখানে ফাইবার অপটিক বা দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড সেবা পৌঁছায়নি। সেখানে স্টারলিংক-এর মাধ্যমে এই দূরদূরান্তের এলাকাগুলোতে ব্যবসা সম্প্রসারণের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হবে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক কোম্পানি, বিশেষ করে যারা ইন্টারনেটের ওপর নির্ভর করে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে, তারা এখন নতুন সম্ভাবনা খুঁজে পাবেন।
এছাড়াও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এনজিও কর্মী, ফ্রিল্যান্সার, স্টার্টআপ উদ্যোক্তা ও অন্যান্য পেশাজীবীরা এই সেবার মাধ্যমে বছরব্যাপী উচ্চগতির, নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবার নিশ্চয়তা পাবে। এটি তাদের কাজের গতিশীলতা বাড়াবে এবং দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবাটি মূলত গ্রাহকদের এমন এক পরিবেশ তৈরি করবে, যেখানে তারা বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে উন্নত মানের ইন্টারনেট সংযোগ পাবে। এটি বিশেষভাবে গ্রামাঞ্চল, দূরবর্তী পাহাড়ি অঞ্চল ও সাগরপারের মতো এমন জায়গাগুলোতে খুব কার্যকর হবে, যেখানে আগে কখনো ফাইবার কিংবা অন্য কোন উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছায়নি।
বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে স্টারলিংকের আগমন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবার সুযোগ বাড়ার ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, বিনোদন ও সরকারি সেবায় আধুনিকায়নের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণেও এটি বড় ভূমিকা পালন করবে।
অবশ্যই, এই সেবাটি দামের কারণে সীমিত কিছু গ্রাহকের জন্য প্রাথমিকভাবে সুবিধাজনক হতে পারে, তবে ভবিষ্যতে প্রযুক্তির প্রসার ও স্থানীয় প্রস্তুতি বাড়ানোর মাধ্যমে আরও অনেক মানুষ এই সেবা পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
সুতরাং, বাংলাদেশের ডিজিটাল ইকোসিস্টেমে স্টারলিংকের যাত্রা শুরু হওয়ায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে, যা দেশের সামগ্রিক প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এখন থেকে প্রযুক্তি প্রেমী ও উচ্চগতির ইন্টারনেট খোঁজে থাকা মানুষের জন্য দেশের সীমানা পেরিয়ে স্টারলিংক এক নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ