
ছবি: সংগৃহীত
৭৮তম কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে বাংলাদেশের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত এনে দিয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আলী’। বিশ্ব চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন এই উৎসবে ‘আলী’ সিনেমাটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগের স্পেশাল মেনশন অর্থাৎ বিশেষ উল্লেখযোগ্য সিনেমা হিসেবে সম্মানজনক স্বীকৃতি লাভ করেছে। এই ঘোষণা এসেছে উৎসবের সমাপনী দিনে, গত শনিবার। এর পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং চলচ্চিত্রের জগতের সেরা তারকাদের শুভেচ্ছা বার্তায় ভাসছে ‘আলী’ সিনেমার নির্মাতা ও পুরো টিম।
বাংলাদেশের সুপারস্টার শাকিব খান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত। শাবাশ! আদনান ও টিম আলী।” এই উৎসবজয়ী চলচ্চিত্রটিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশের কিংবদন্তি অভিনেত্রী জয়া আহসানও। তিনি বলেন, “ঘুম থেকে উঠে এর চেয়ে আর ভালো খবর কী হতে পারে? অভিনন্দন আলী টিম।” মেহজাবীন চৌধুরী লিখেছেন, “আমার স্বামী ইতিহাস রচনা করেছেন,” এবং চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ বলেন, “বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে উজ্জ্বল করে তোলার জন্য আদনান আল রাজীব এবং আলী টিমের প্রতি কৃতজ্ঞতা। বাংলাদেশকে গর্বিত করার জন্য ধন্যবাদ।”
চিত্রনায়িকা বিদ্যা সিনহা মিমও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছেন অভিনন্দন, “আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল হয়েছে। অভিনন্দন আদনান আল রাজীব ও আলী টিম।” বিখ্যাত নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী শুভেচ্ছা বার্তায় বলেছেন, “ঈশ্বর তোমাদের মঙ্গল করুক আদনান আল রাজীব, কামরুল হাসান খসরু ও টিম। ভালোবাসা।” আর নির্মাতা আশফাক নিপুণ আরও গর্ব নিয়ে লিখেছেন, “আজ আমি সবচেয়ে গর্বিত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও আমার বন্ধু আদনান আল রাজীবের জন্য। তার শর্টফিল্ম আলী কান উৎসবে বিশেষ জুরি পুরস্কার জিতেছে!”
এছাড়াও অভিনেত্রী সাবিলা নূর বলেছেন, “অভিনন্দন আদনান আল রাজীব! ওহ মাই গড, কী অসাধারণ সাফল্য মাশাআল্লাহ! তোমার এবং তোমার দলের জন্য আমি গর্বিত… এটা তো মাত্র শুরু।” অন্য অনেক তারকাও সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের অভিনন্দন বার্তা দিয়ে চলচ্চিত্রটির সাফল্য উদযাপন করেছেন, যার মধ্যে আছেন আজমেরী হক বাঁধন, রায়হান রাফী, অনম বিশ্বাস, তৌসিফ মাহবুব, শবনম ফারিয়া, কাজী নওশাবা আহমেদ, মৌসুমী হামিদ, মোহসীনা আক্তার, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামাল।
কান উৎসবের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ‘আলী’ সিনেমাটির গল্পের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হয়েছে। সিনেমাটি একটি উপকূলীয় শহরের পটভূমিতে গড়ে উঠেছে, যেখানে নারীদের গান গাইতে দেয়া হয় না। এই কঠোর সামাজিক নিয়মের মাঝে এক কিশোর গান প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে উপকূল ছেড়ে শহরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। সিনেমাটিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আল আমিন।
কান উৎসবে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে আদনান আল রাজীব জানান, “এটা আমাদের জন্য অবশ্যই বিশেষ এবং নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্যও। প্রথমবারের মতো আমাদের দেশের সিনেমা এমন একটি মর্যাদার সম্মান অর্জন করলো। বর্তমানে বাংলাদেশ রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমন সময়ে আমরা কিছুটা হলেও মানুষের মাঝে আশা সৃষ্টি করতে পেরেছি, দেশের জন্য ইতিবাচক একটি ধারণা তৈরি করতে পেরেছি।”
‘কান উৎসবে প্রথমবারের মতো এ ধরনের স্বীকৃতি পাওয়ার অনুভূতি কী’—এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমি কখনো ভাবিনি এমন কিছু অর্জন করব। আমি শুধু আমার গল্প শৈল্পিক মাধ্যমের মাধ্যমে বলতে চেয়েছিলাম, যা আমি সবসময়ই করি। ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। এটা আমার জীবনের জন্য এবং দেশের জন্য অনেক বড় অর্জন।”
‘আলী’ সিনেমাটি এমন একটি গল্প, যেখানে একজন আলী প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উঠে আসেন, নিজে নীরবেই সংগীতচর্চা চালিয়ে যান। আদনান আল রাজীব এই সিনেমাটি উৎসর্গ করেছেন দেশের গায়ক ও সংগীতশিল্পীদের, যারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিজেদের মেধা ও শিল্পতাকে বিকশিত করছেন।
‘আলী’ সিনেমার এই সাফল্য বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে এটি এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। বিশ্বজনীন এই সম্মান বাংলাদেশের তরুণ নির্মাতাদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
বিশ্বের চলচ্চিত্রপ্রেমীরা এখন ‘আলী’ সিনেমাটি সম্পর্কে জানার জন্য উৎসুক, আর এর নির্মাতা ও টিমের সামনে রয়েছে আরও বড় স্বপ্ন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার দিগন্ত। এককথায়, ‘আলী’ শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি বাংলাদেশের সিনেমার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির এক নতুন অধ্যায়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ