
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী নুসরাত ইমরোজ তিশা সব সময়েই দর্শকের কাছে একজন প্রতিভাবান, মার্জিত ও গুণী অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিত। মঞ্চ, টিভি নাটক এবং চলচ্চিত্রে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় নিজেকে অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিশা। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার নামে একটি বেলি ড্যান্স ভিডিও ভাইরাল হলে তীব্র আলোচনার জন্ম নেয়। অনেকেই ভিডিওটি দেখে বিভ্রান্ত হন এবং প্রশ্ন তোলে—এটি সত্যিই কি তিশার কোনো নৃত্য পরিবেশনার অংশ?
তবে অনুসন্ধান করে স্পষ্টভাবে জানা গেছে, ভিডিওটি ভুয়া এবং নুসরাত ইমরোজ তিশার কোনো সম্পর্ক নেই এতে। ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে ডিপফেক প্রযুক্তির মাধ্যমে, যেখানে একজন ভারতীয় বেলি ড্যান্সারের শরীরের ওপর তিশার মুখ বসিয়ে ভিডিওটিকে সম্পাদনা করে ছড়ানো হয়েছে।
রিউমার স্ক্যানার নামের একটি অনলাইন যাচাইকারী দল অনুসন্ধানে নেমে ভিডিওর উৎস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে। তারা নিশ্চিত করে যে, ভিডিওটিতে দেখা যাওয়া মূল নৃত্যশিল্পীর নাম ইশিকা সিং রাজপুত। তিনি একজন পেশাদার ভারতীয় বেলি ড্যান্সার। তার ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা গেছে, একই ব্যাকগ্রাউন্ড এবং পোশাকে ওই নাচের ভিডিওটি তিনি গত ২৩ মার্চ তারিখে পোস্ট করেছিলেন। ওই ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে আরও বেশ কয়েকটি ভিডিও পাওয়া যায় যেখানে তাকে একই পোশাকে একই পরিবেশে নাচতে দেখা গেছে।
মূল ভিডিও এবং ভাইরাল হওয়া ডিপফেক ভিডিওটি তুলনা করে দেখলে বোঝা যায়, উভয় ভিডিওতেই পোশাক, অঙ্গভঙ্গি এবং নৃত্যর ভঙ্গিমা একেবারে হুবহু মিলে যায়। পার্থক্য একমাত্র মুখমণ্ডলে। ভাইরাল ভিডিওতে তিশার মুখ ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে, যা প্রযুক্তিগতভাবে ডিপফেক হিসেবে পরিচিত।
ডিপফেক (Deepfake) একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-নির্ভর প্রযুক্তি, যা খুব বাস্তবসম্মত কিন্তু সম্পূর্ণ ভুয়া ভিডিও বা অডিও কনটেন্ট তৈরি করতে সক্ষম। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির মুখের অবয়ব বা কণ্ঠস্বর অন্য একটি ভিডিও বা অডিওর সঙ্গে এমনভাবে যুক্ত করা হয়, যাতে মনে হয় তিনিই তা করছেন বা বলছেন।
ডিপফেক ভিডিওগুলোকে সাধারণ মানুষের পক্ষে সহজে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে, কারণ প্রযুক্তির ব্যবহার এতটাই নিখুঁত হয় যে, ভিডিওটি এক নজরে ভুয়া মনে না-ও হতে পারে। এই কারণে এটি এখন বিশ্বব্যাপী এক ভয়ংকর সাইবার হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। খ্যাতিমান ব্যক্তিদের সম্মানহানি ও সামাজিকভাবে হেয় করার উদ্দেশ্যে অনেক সময়েই এ ধরনের ভিডিও তৈরি করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
নুসরাত ইমরোজ তিশার মতো একজন সম্মানিত শিল্পীর বিরুদ্ধে এভাবে পরিকল্পিত ভিডিও তৈরি ও ছড়ানোর ঘটনা গভীর উদ্বেগের বিষয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ফলে বহু মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছেন। অনেকেই না জেনে, না বুঝে ভিডিওটি শেয়ার করেছেন, যা তিশার ব্যক্তিগত ও পেশাগত সম্মান ক্ষুণ্ণ করার একটি ভয়ানক উদাহরণ।
এ বিষয়ে এখনো তিশার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া না আসলেও সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন ঘটনার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশে সাইবার নিরাপত্তা আইন রয়েছে, যার আওতায় এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে মামলা করা যেতে পারে। তিশা চাইলে তার সম্মানহানির অভিযোগ এনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় জালিয়াতদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন।
এই ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করে, অনলাইন দুনিয়ায় প্রতারণা কতটা ভয়ংকর রূপ নিতে পারে। শুধু তিশা নয়, এর আগে দেশ-বিদেশের বহু নামী ব্যক্তির মুখ বসিয়ে এমন ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছে। ফলে ব্যবহারকারীদের সতর্ক থাকতে হবে এবং যেকোনো ভিডিও বা তথ্য যাচাই-বাছাই না করে তা বিশ্বাস বা প্রচার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তি যেমন উপকারে আসতে পারে, তেমনি অপব্যবহারের মাধ্যমে সমাজে বিশৃঙ্খলা, চরিত্রহনন ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতেও সক্ষম। তাই এসব ভিডিওর সত্যতা যাচাই না করে মন্তব্য বা শেয়ার করা উচিত নয়।
সামাজিক মাধ্যমে তিশার নামে ছড়িয়ে পড়া বেলি ড্যান্স ভিডিওটি ভুয়া, এটি ভারতীয় ড্যান্সার ইশিকা সিং রাজপুতের ভিডিও যা ডিপফেক প্রযুক্তির মাধ্যমে বিকৃত করা হয়েছে। এ ধরনের ভিডিও ছড়ানো দণ্ডনীয় অপরাধ এবং এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ