
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটিয়েছে এজেন্ট ব্যাংকিং। বিশেষ করে প্রবাসীদের রক্ত-ঘাম ঝরানো উপার্জন এখন দ্রুততম সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষদের কাছে। ফলে একদিকে যেমন আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বেড়েছে, অন্যদিকে গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এপ্রিল-জুন সময়কালের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেবলমাত্র এই তিন মাসেই এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে এসেছে প্রায় ১ লাখ ৮৩ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা সমপরিমাণ প্রবাসী আয়। যা আগের বছরের তুলনায় ১৬ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, এই বিপুল অঙ্কের প্রায় ৯০ শতাংশ অর্থই পৌঁছেছে গ্রামের পরিবারগুলোর হাতে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনটি ব্যাংক প্রায় পুরো খাতকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি একাই বিতরণ করেছে ৫৫ দশমিক ০৮ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ১ দশমিক ০১ লাখ কোটি টাকা।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক, যাদের মাধ্যমে এসেছে ৫১ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। তৃতীয় স্থানে ব্যাংক এশিয়া, যাদের বিতরণকৃত অর্থ প্রায় ১৪ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন— “এটি কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়; দেশের প্রান্তিক অঞ্চলে আর্থিক সেবা পৌঁছে দেওয়ার মৌলিক পরিবর্তনের প্রতিফলন। এজেন্ট ব্যাংকিং এখন মূলধারার প্রবাসী আয় বিতরণ চ্যানেলে পরিণত হয়েছে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, এজেন্ট ব্যাংকিং বৈধ পথে অর্থ পাঠানোকে উৎসাহিত করছে। ফলে হুন্ডি কমছে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী হচ্ছে।
গ্রামীন পরিবারগুলো বলছে, এখন আর দূরে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয় না। নোয়াখালীর শামেরগাঁওয়ের বিবি হাজরার তিন ছেলে প্রবাসে কাজ করেন। তিনি জানান— “ফোনে পিন আসার পর স্থানীয় এজেন্টকে দেখাই, মিনিটের মধ্যেই নগদ টাকা হাতে পাই। তাছাড়া ২ দশমিক ৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনাও যোগ হয়। আমাদের জন্য এটা আশীর্বাদ।”
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন— ইসলামী ব্যাংকের প্রতি প্রবাসীদের আস্থা এবং ডাচ-বাংলার প্রযুক্তি–ভিত্তিক নেটওয়ার্ক তাদের এগিয়ে রেখেছে।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাওয়া অর্থ শুধু ভোগ খরচে নয়; শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্ষুদ্র ব্যবসা, কৃষি—সব ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ হচ্ছে।
তবে এখনো কিছু কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ আছে। ৩০টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স পেলেও রেমিট্যান্স বিতরণে মূলত তিন-চারটি ব্যাংকই নেতৃত্ব দিচ্ছে। এছাড়া নারী উদ্যোক্তারা এখনও পিছিয়ে আছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ