
ছবি: সংগৃহীত
দেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে পোড়া রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুহার। চিকিৎসা অবকাঠামো সীমিত থাকায় আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশ সময়ই ঢাকার জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ছুটতে হয়। কিন্তু এত বিপুল চাহিদা মেটাতে একক প্রতিষ্ঠান সক্ষম নয়। এ কারণেই পাঁচটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন ভবনে স্থাপন করা হচ্ছে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট।
“পাঁচ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপন” শীর্ষক প্রকল্পটির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল অনেক আগেই। ২০১৭ সালের অক্টোবরে সরকারের সঙ্গে সৌদি উন্নয়ন তহবিলের ঋণ চুক্তি হয়। মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৫৬ কোটি টাকা, যার মধ্যে ২৫৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা আসার কথা ছিল সৌদি ঋণ থেকে। কিন্তু নানা জটিলতায় অনুমোদনের আগেই শেষ হয়ে যায় ঋণ চুক্তির মেয়াদ। এরপর করোনা মহামারির কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন আরও পিছিয়ে যায়। অবশেষে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে একনেকে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি।
প্রথমে পরিকল্পনা ছিল বিদ্যমান ভবনের ওপর সম্প্রসারণের মাধ্যমে বার্ন ইউনিট তৈরি করা। কিন্তু রাজশাহীর আইসিইউ ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ায় নতুন স্থানে ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। পরে সৌদি উন্নয়ন তহবিলের নির্দেশনায় পাঁচ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই পৃথক নতুন ভবন করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। এতে প্রকল্প ব্যয় বাড়ে প্রায় দ্বিগুণ। নতুন সংশোধনী প্রস্তাবে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৪৬৪ কোটি ৭৪ লাখ এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ৩৫১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আসবে।
মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পটি ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে কাজ শুরুই হয়নি। তাই এখন সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ সাড়ে তিন বছরের প্রকল্পটি শেষ করতে লাগবে সাড়ে ৬ বছর।
পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর দেশে প্রায় ৩ লাখ ৬৫ হাজার মানুষ অগ্নিদগ্ধ হন এবং প্রায় ৫ হাজার ৬০০ জন মারা যান। যথাযথ চিকিৎসা সুবিধার অভাবে পোড়া রোগীদের মৃত্যু ও দুর্ভোগ বেড়ে যায়। রাজধানীর একমাত্র জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের ওপর চাপ বাড়ছে দিন দিন।
সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে এরই মধ্যে হাজার হাজার পোড়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। যেমন—সিলেটে চার বছরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫ হাজার ৪১৮ জন, রাজশাহীতে ৫ হাজার ৪০৩ জন, ফরিদপুরে ৮ হাজার ৭০০ জন, রংপুরে ২ হাজার ৮৮৮ জন এবং বরিশালে ৯৫৮ জন রোগী। এত রোগীর জন্য বিশেষায়িত ইউনিট জরুরি হয়ে পড়েছে।
আগামী রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে একনেক সভায় প্রকল্পের সংশোধিত প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরিকল্পনা কমিশনের সচিব ড. কাউয়ুম আরা বেগম মন্তব্য দিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৬০ মিলিয়ন মানুষের জন্য সাশ্রয়ী ও মানসম্মত পোড়া রোগী সেবা নিশ্চিত হবে, বিদেশে চিকিৎসার প্রবণতা কমবে এবং ঢাকার ওপর চাপ হ্রাস পাবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ