
ছবি: সংগৃহীত
ভারত, নেপাল ও হিমালয়ের পাদদেশে গত কয়েকদিন ধরে টানা বর্ষণের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। উজানের পাহাড়ি এলাকায় বুধবার থেকে শুরু হওয়া অতিবৃষ্টি এবং দেশের ভেতরে রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের কারণে নদনদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, তিস্তা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও পদ্মার পানি ক্রমেই বাড়ছে। এর ফলে নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটসহ পদ্মা-যমুনা তীরবর্তী অনেক জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বৃহস্পতিবার দুপুরে নদীর পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, যা বিকেলে সামান্য কমে ১৫ সেন্টিমিটারে নেমে আসে। বুধবার সকালে প্রথমে বিপৎসীমার সাত সেন্টিমিটার ওপর ওঠার পর পানির উচ্চতা ওঠানামা করতে থাকে। ফলে হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসল রক্ষায় অনেকে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। কেউ মাচা তুলে ভাসমান জীবনযাপন করছেন, কেউ নৌকায় রাত কাটাচ্ছেন। সবজি, পাট ও রোপা আমনের বিস্তীর্ণ জমি তলিয়ে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিবছর উজানে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের জলকপাট খুলে দেওয়ার ফলে হঠাৎ পানি বেড়ে বন্যা দেখা দেয়। কলেজ শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, “ত্রাণে নয়, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া আমাদের এই দুর্ভোগের স্থায়ী সমাধান নেই।” জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এক হাজার ৮০০ পরিবারকে সরকারি সহায়তা হিসেবে ২৩০ টন চাল, ৭০০ টন শুকনো খাবার এবং রান্না করা খিচুড়ি বিতরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রামে দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার সাত সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রসহ জেলার সব নদনদীর পানি বাড়ছে। রাজারহাট, উলিপুর ও সদর উপজেলায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাউবোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, জেলার ৩০টি ভাঙন পয়েন্টের মধ্যে ২০টিতে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
এদিকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হওয়ায় আট দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ইউনিয়নের রাস্তাঘাট ও বিদ্যালয়পথে পানি জমে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে বাধা সৃষ্টি করছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে, যা তিন দিনের মধ্যে অতিক্রম করতে পারে বলে পাউবো জানিয়েছে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মার পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ সেন্টিমিটার বেড়েছে। যদিও বিপৎসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে, তবে চারটি ইউনিয়নের প্রায় ৪৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট ও এক হাজার হেক্টর জমির ফসল।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুরে তিস্তা নদীর ওপর দ্বিতীয় সড়ক সেতুর পশ্চিম তীরে বাঁধের ৬০ মিটার এলাকা ধসে গেছে। এতে বাঁধের ভেতরে ৭০ ফুট গভীর গর্ত তৈরি হয়েছে, যা লালমনিরহাট-রংপুর আঞ্চলিক সড়কসহ তিনটি গ্রামকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, তিস্তা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও পদ্মার পানি আরও বাড়তে পারে। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ