
ছবি: সংগৃহীত
দেশের দুর্বল ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বড় ধরনের একীভূতকরণ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে মোট খরচ হতে পারে প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে প্রাথমিকভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করতে প্রয়োজন হতে পারে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা, আর ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ৭–৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর স্পষ্ট করেছেন, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে শুধু তাত্ক্ষণিক তারল্য সহায়তা দিয়ে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তাই দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা এবং প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা ফিরিয়ে আনার জন্য একীভূতকরণের পথ নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, “ব্যাংকগুলোকে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা এবং টেকসই উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। একীভূতকরণের মাধ্যমে খাত পুনর্গঠন হলে আমানতকারীর স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে এবং সামগ্রিক ব্যাংকিং খাত শক্তিশালী হবে।”
বিশ্বের অনেক দেশে সরকার দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণে বিনিয়োগ করেছে এবং পরবর্তীতে লাভসহ সেই অর্থ ফেরত নিয়েছে। বাংলাদেশেও একই মডেল অনুসরণ করা হবে। সরকারের বিনিয়োগ ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
বর্তমানে পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক—প্রাথমিকভাবে একীভূতকরণের আলোচনায় রয়েছে। তবে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকা এক্সিম ব্যাংক চাইলে একীভূতকরণ থেকে সরে দাঁড়াতে পারবে, কিন্তু সেক্ষেত্রে তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্পদ মূল্যায়নে দেখা গেছে, এই ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। ইউনিয়ন ব্যাংকের মোট ঋণের ৯৭.৮০ শতাংশ খেলাপি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৯৬.৩৭ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৬২.৩০ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকের ৪৮.২০ শতাংশ ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, একীভূতকরণের মাধ্যমে ব্যাংক খাত শুধু সংকট থেকে বেরিয়ে আসবে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে আরও স্থিতিশীল ও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। গভর্নর ড. আহসান মনসুর বলেন, “প্রাথমিকভাবে পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করার পরিকল্পনা করা হলেও, পরবর্তী ধাপে আরও ১০–১৫টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই প্রক্রিয়ার আওতায় আসতে পারে। একীকরণের প্রক্রিয়া সফল হলে আমানতকারীদের টাকা নিরাপদ থাকবে।”
উল্লেখ্য, প্রাথমিক ধাপে ইসলামী ধারায় পরিচালিত পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করা হচ্ছে কারণ এ ব্যাংকগুলো একই নীতিমালা অনুসরণ করে। ভবিষ্যতে মোট ২০টি ব্যাংককে ধাপে ধাপে একীভূত করার পরিকল্পনা রয়েছে। মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সাধারণত বিদ্যমান কর্মীদের রাখার শর্তে ব্যাংকগুলো রাজি হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনে জোরপূর্বক মার্জার বাস্তবায়ন করতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর বলেন, “সব দুর্বল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান একীভূত করার ভার সরকার এই মুহূর্তে বহন করতে পারবে না। সরকার তারল্য দিয়ে সবাইকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে না; তাদের নিজেদের দাঁড়াতে হবে। কারণ প্রায় ৩৫–৪০ হাজার কোটি টাকার মতো অর্থ লাগবে।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ