
ছবি: সংগৃহীত
উপমহাদেশে আবারও যুদ্ধের ঘনঘটা। সামরিক প্রস্তুতি, রাজনৈতিক উত্তেজনা, কূটনৈতিক তিক্ততা এবং পারস্পরিক হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্ভাব্য বড় সংঘাতের শঙ্কা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ইতিহাসের পুরনো বৈরিতা যেন আবার মাথা তুলছে।
৪ আগস্ট ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী এক ভাষণে সতর্ক করে বলেন—দেশের পরবর্তী যুদ্ধ প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত শুরু হতে পারে এবং সেটি মোকাবিলায় লাগবে পুরো জাতির সম্মিলিত শক্তি। আইআইটি মাদ্রাজে দেওয়া এই বক্তব্যে তিনি কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করলেও তাঁর মন্তব্যকে স্পষ্টভাবেই পাকিস্তান প্রসঙ্গে ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। সেনাপ্রধান বলেন, “পরেরবার এটি আরও বড় হতে পারে। আমরা জানি না, প্রতিপক্ষ একা যুদ্ধ করবে নাকি অন্যদের সমর্থন পাবে। তবে আমি নিশ্চিত, তারা একা থাকবে না। এখানেই আমাদের সতর্ক থাকা জরুরি।”
এ বক্তব্যের পেছনে সাম্প্রতিক উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনাবলির বড় ভূমিকা রয়েছে। ২২ এপ্রিল জম্মু–কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকেই ভারতীয় সেনাবাহিনী সম্ভাব্য বড় অভিযানের প্রস্তুতি শুরু করেছে। সীমান্তে টহল জোরদার, অস্ত্র মজুদ বৃদ্ধি এবং সেনা মহড়া বৃদ্ধির খবর ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এসেছে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় এক নৈশভোজে বসে ভারতের বিরুদ্ধে তীব্র হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, “পাকিস্তান একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। যদি আমাদের অস্তিত্ব সংকটে ফেলা হয়, তবে আমরা বিশ্বের অর্ধেককে সঙ্গে নিয়েই ধ্বংস হব।” তাঁর এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
মুনির শুধু পারমাণবিক যুদ্ধের ইঙ্গিতই দেননি, বরং ভারতের সিন্ধুনদীর ওপর বাঁধ নির্মাণ পরিকল্পনা নিয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা অপেক্ষা করব, ভারত বাঁধ তৈরি করুক। একবার তৈরি করলেই সেটি মিসাইল দিয়ে ধ্বংস করব। সিন্ধুনদী ভারতীয়দের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, আমাদের মিসাইলের কোনো অভাব নেই।”
এই পরিস্থিতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বক্তব্যে আরও উসকে উঠেছে। ইসলামাবাদে আন্তর্জাতিক যুব দিবসে তিনি বলেন, “যদি ভারত আমাদের পানি স্থায়ীভাবে আটকানোর চেষ্টা করে, আমরা তাদের এমন শিক্ষা দেব যা তারা কোনোদিন ভুলবে না।”
এদিকে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে মুনিরের মন্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, “পারমাণবিক হুমকি দেওয়া পাকিস্তানের পুরোনো অভ্যাস।” নয়াদিল্লি জানিয়েছে, তারা কোনোভাবেই পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইলের কাছে নতি স্বীকার করবে না এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় সব ব্যবস্থা নেবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ