
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন শহর ও জেলা কিশোর অপরাধীদের দাপটে উত্তাল হয়ে উঠেছে। ঢাকার কাছের শিল্পনগরী গাজীপুরে কমপক্ষে ৩০টি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। এসব চক্র এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, দখলবাজি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, মারামারি এবং কখনও কখনও খুনের ঘটনাও ঘটাচ্ছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, কেউ নারীদের গলা থেকে সোনার চেইন ছিনিয়ে নেয়, কেউ তরুণীদের উত্ত্যক্তও করে।
গাজীপুরে কিছু চক্র রাজনৈতিক প্রভাব বা স্থানীয় প্রভাবশালীদের আশ্রয়ে দাপট দেখাচ্ছে। সম্প্রতি ইলিয়াস মোল্লা গ্রুপ বিপুল দেশীয় অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। কিন্তু তাদের অনুসারীরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ২৮ জুন এক কিশোরের পিস্তল উঁচিয়ে ফাঁকা গুলি ছোড়ার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
ময়মনসিংহ মহানগরের পার্ক এলাকায় কিশোরদের বেপরোয়া কার্যক্রমও চোখে পড়ে। তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক চক্র থাকলেও সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। মোটরসাইকেল চালিয়ে পার্ক ও আশপাশের এলাকায় দাপট দেখাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ তাদের তালিকা তৈরি এবং নজরদারি বাড়াচ্ছে।
চট্টগ্রামে কিশোর অপরাধীদের সংগঠন ‘বড় ভাই’ পরিবর্তন করেছে। তারা ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মারধর এবং খুনাখুনিতে জড়াচ্ছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানা এলাকায় প্রতিটি চক্রের সদস্য সংখ্যা ১৫ থেকে ৩০ জন। স্থানীয় সূত্র জানাচ্ছে, আগের ‘বড় ভাই’ প্রতিস্থাপন হওয়ায় অপরাধীরা নতুন কৌশলে নিজেদের ক্ষমতা বজায় রাখছে।
রাজশাহী মহানগরে সুবিধাভোগী শ্রেণির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে গড়ে উঠেছে কিশোর চক্র। এসব চক্র সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডে সক্রিয়। তারা কখনও দলীয় পরিচয়ে, কখনও বিভিন্ন ব্যানারে অপরাধ চালাচ্ছে।
সিলেটেও কিশোর অপরাধীরা তৎপর। তারা স্কুল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে নতুন আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা খুঁজছে। নগরের ছয় থানা এলাকায় তাদের অপতৎপরতা নজরে এসেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই টমটম চালায়, কেউ স্কুলপড়ুয়া, কেউ বস্তির বাসিন্দা।
কক্সবাজারের পর্যটন শহরেও কিশোর অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। শতাধিক চক্রের বেশির ভাগ সদস্যই রোহিঙ্গা। কলাতলী গোলচত্বর স্টেশনে অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা কিশোর-কিশোরী অবস্থান করে। রাজধানী ঢাকা থেকেও কিশোর অপরাধীরা এখানে এসে সক্রিয় হচ্ছে।
কুমিল্লা ও খুলনাতেও কিশোর অপরাধী চক্রের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। কুমিল্লায় ২০টি চক্র সক্রিয়, যেখানে অতীত আট বছরে কিশোরদের হাতে ১২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। খুলনা মহানগরের আটটি থানায় ২০৮ জন কিশোর অপরাধী শনাক্ত হয়েছে। তারা বালিকা বিদ্যালয় ও মহিলা কলেজ এলাকায় দাপট দেখাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কিশোর অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে সামাজিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাড়ানো প্রয়োজন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে আড্ডা বন্ধ, অভিভাবক সচেতনতা, কাউন্সেলিং এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ