
ছবি: সংগৃহীত
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি অবরোধ ও দীর্ঘ যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে ভয়াবহ মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে, যার সবচেয়ে মর্মান্তিক প্রভাব পড়েছে শিশুদের ওপর। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)-এর প্রধান জেনারেল ফিলিপ লাজ্জারিনি জানিয়েছেন, অপুষ্টি ও ক্ষুধার কারণে ইতোমধ্যে কমপক্ষে ১০০ শিশু মারা গেছে। এই সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে, কারণ গাজায় খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তার প্রবাহ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
বুধবার এক বিবৃতিতে লাজ্জারিনি বলেন, “অপুষ্টি ও ক্ষুধার কারণে গাজায় শিশুরা একের পর এক মারা যাচ্ছে। এই শিশুরা কোনো সংঘাতের পক্ষভুক্ত নয়, তারা কেবল বেঁচে থাকার অধিকার চায়।” তিনি জানান, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলমান সংঘাতে ইসরাইলি বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে ৪০ হাজারের বেশি শিশু নিহত বা আহত হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই স্থায়ী শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে গেছে।
ইউএনআরডব্লিউএ জানায়, বর্তমানে গাজায় অন্তত ১৭ হাজার শিশু ‘অনুসঙ্গহীন ও বিচ্ছিন্ন’ — অর্থাৎ তারা তাদের অভিভাবক বা পরিবারের সঙ্গে নেই। এদের অনেকে বাবা-মাকে হারিয়েছে বা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এছাড়া প্রায় ১০ লাখ শিশু গভীরভাবে মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত এবং বছরের পর বছর শিক্ষা থেকে বঞ্চিত।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বুধবার জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টির কারণে আরও আটজন মারা গেছে, যার মধ্যে তিনজন শিশু। এ নিয়ে দুর্ভিক্ষে মোট মৃতের সংখ্যা ২৩৫ জনে পৌঁছেছে, যার মধ্যে ১০৬ জন শিশু। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, যদি অবিলম্বে অবরোধ না শিথিল করা হয়, তবে মৃতের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
ইসরাইল ২০২৫ সালের ২ মার্চ থেকে গাজার প্রধান প্রবেশপথ ‘গাজার ক্রসিং’ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়, যার ফলে মানবিক সহায়তার প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সীমিত পরিমাণ ত্রাণ ঢোকার অনুমতি দিলেও তা জনগণের ন্যূনতম চাহিদার তুলনায় নগণ্য। গাজার জন্য প্রতিদিন অন্তত ৬০০ ট্রাক ত্রাণ এবং ৫০টি ট্রাক জ্বালানি প্রয়োজন, কিন্তু বর্তমানে এর মাত্র এক-চতুর্থাংশও সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ইসরাইলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১,২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে। এরপরই ইসরাইল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। এই অভিযান ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলে, যার ফলে গাজার অবকাঠামো, হাসপাতাল, স্কুল—সবই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, মাত্র দুই মাসের মধ্যেই ১৮ মার্চ থেকে নতুন করে অভিযান শুরু করে ইসরাইলি সেনারা।
২০২৫ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা চলছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ