
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিতর্ক ও ইতিহাসের পুনঃবিবেচনা এখনো উত্তপ্ত। এই প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ও যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মির্জা গালিব বলেন, “বাংলাদেশে আমাদের তিন জন শেখ মুজিব আছে।”
ড. গালিব তাঁর ফেসবুক ভেরিফায়েড আইডিতে বুধবার (১৩ আগস্ট) রাত ৯টা ৫৭ মিনিটে একটি রি-পোস্টে এই মন্তব্য করেন। তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন কিভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মূর্তিকে একসময় একনায়ক ও ফ্যাসিস্ট রূপে দেখানো হয়েছে।
ড. গালিবের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রথম রূপ হলো মুক্তিযুদ্ধের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, যিনি ১৯৭১ সালের মুক্তি সংগ্রামের নেতা ছিলেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্যতম স্থপতি। এই রূপে শেখ মুজিব ছিলেন দেশের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস, স্বাধীনতার চেতনার প্রতীক।
দ্বিতীয় রূপ হলো একনায়ক শেখ মুজিব, যিনি রক্ষীবাহিনী গঠন করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সূচনা করেছিলেন এবং একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা কায়েম করে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলেন। ড. গালিব বলেন, “শেখ মুজিবই প্রথম সরকার-প্রধান যিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বেইমানী করে গণতন্ত্র হত্যা করেছেন।” তিনি এই ইতিহাসকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ট্রাজেডি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তৃতীয় রূপ হলো ফ্যাসিস্ট শেখ মুজিব, যা বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ড. গালিব বলেন, “হাসিনা যে চেতনা ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করেছেন এবং শেখ মুজিবের মূর্তিকে ব্যবহার করে দীর্ঘ সময় ফ্যাসিবাদ চালিয়েছেন, সেই প্রক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ফ্যাসিস্ট মুজিবের প্রতীক হয়ে উঠেছে।” তিনি জানান, আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র ও জনতা এই ফ্যাসিস্ট রূপের মূর্তি ভাঙছে এবং এটিকে পুনঃস্থাপন বা ভাঙা আমাদের রাজনৈতিক দায়িত্ব।
ড. গালিব আরও বলেন, আগস্টে আমাদের দায়িত্ব হলো বুঝা, কিভাবে বিপ্লব ও স্বাধীনতার পরে নায়করা কখনও পতিত হয়ে একনায়ক বা ফ্যাসিস্ট রূপ ধারণ করতে পারে। তিনি সতর্ক করেছেন, ইতিহাসকে সঠিকভাবে চর্চা না করলে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, হাসিনার ফ্যাসিবাদ সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু ইতিহাসে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় থাকবেন।
ড. গালিব বলেন, “আমরা ২৬ মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করব। কিন্তু আগস্টে আমাদের রাজনৈতিক কর্তব্য হলো শেখ মুজিবের পতন, একনায়ক ও ফ্যাসিস্ট রূপের বিশ্লেষণ করা। পতিত একনায়ককে সমালোচনা না করে ইনডেমনিটি প্রদান করলে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের জন্ম হয়।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ