
ছবি: সংগৃহীত
রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, আধুনিকায়ন ও জনবান্ধব সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে গঠিত ১১টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন বাদে বাকি ১০টি কমিশনের মোট ৩৬৭টি সুপারিশকে আশু বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে সরকার। এরই মধ্যে এসব সুপারিশের মধ্যে ৩৭টি কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে, যা নাগরিক সেবা, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন, দুর্নীতি দমন, নারীর সুরক্ষা, নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং শ্রম খাতে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সরকারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বাস্তবায়িত সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে— নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন কর্তৃক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও গণমাধ্যম নীতিমালা জারি। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন নাগরিকদের পাসপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিল করেছে এবং সরকারি প্রতিটি দপ্তরে গণশুনানি নিশ্চিত করতে পরিপত্র জারি করেছে।
দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন তদন্তপূর্ব আবশ্যিক অনুসন্ধান পদ্ধতি বাতিল করেছে, দুদক আইনের ধারা ৩২-এর ক উপধারা বিলোপ করেছে, উচ্চমাত্রার দুর্নীতি তদন্তে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে আলাদা টাস্কফোর্স গঠন করেছে এবং সিএজি ও আইএমইডির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন সুপ্রিমকোর্টে বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত সুপারিশ কার্যকর করেছে, আদালতে ইনফরমেশন ডেস্ক স্থাপন করেছে, নারী ও শিশুর জন্য পৃথক স্থান নির্ধারণ করেছে, অনলাইনে সরকারি সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ চালু করেছে, আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা হলে বিকল্প আইনজীবী নিয়োগে বাধা অপসারণে সার্কুলার জারি করেছে, আইনগত সহায়তার সঙ্গে মধ্যস্থতা কার্যক্রম যুক্ত করেছে, দেওয়ানি ও ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করে মামলার নিষ্পত্তির গতি বাড়িয়েছে।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন সাক্ষী সুরক্ষা ও অপরাধের শিকারদের সুরক্ষায় আইনি কাঠামো প্রণয়ন করেছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আইনজীবী ও বিচারকদের জেন্ডার সংবেদনশীলতা প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
শ্রম খাত সংস্কার কমিশন ‘যুবক’ শব্দের সংজ্ঞা এককভাবে নির্ধারণ করেছে, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইনে সংশোধন এনে নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেছে, প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য বাধ্যতামূলক জীবনবিমা চালু করেছে, আত্মীয়ের পাঠানো ভিসায় যাওয়া শ্রমিকদের নিজে ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সুযোগ দিয়েছে, অভিবাসী নারী শ্রমিকদের নিজ নামে ব্যাংক হিসাব খোলা নিশ্চিত করেছে, এবং প্রাক-অভিবাসন পর্যায়ে অধিকার ও সুরক্ষা বিষয়ে প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করেছে।
এছাড়া বাস্তবায়িত সুপারিশে রয়েছে— দুর্ঘটনায় আহত বা নিহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ, গোপনীয় অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা চালু, শ্রম আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধি, শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকা হালনাগাদ, শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, যৌক্তিক ছুটি, কারখানা পরিদর্শন প্রতিবেদন ওয়েবসাইটে প্রকাশ, ঝুঁকি ভাতা নিশ্চিতকরণ, নারীদের রাতের শিফটে নিরাপত্তা ও পরিবহন ব্যবস্থা, এবং ট্যানারি শিল্পে বিশেষ প্রশিক্ষিত শ্রম পরিদর্শক নিয়োগ।
সরকার জানিয়েছে, বাকি ৩৩০টি আশু বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশ ধাপে ধাপে কার্যকর হবে, যা রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাঠামো থেকে শুরু করে অর্থনীতি, বিচার, সুশাসন ও নাগরিক অধিকার সব খাতেই যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ