
ছবি: সংগৃহীত
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভয়াবহ এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হচ্ছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। অব্যাহত ইসরাইলি সামরিক অভিযানে প্রতিদিন ঝরছে নিরীহ মানুষের রক্ত, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে বসতবাড়ি, হাসপাতাল ও বাজার। শুধু গোলাবর্ষণ নয়—গাজায় এখন ক্ষুধাকেও ব্যবহার করা হচ্ছে অস্ত্র হিসেবে, যা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ক্ষুধা ও খাদ্যসংকট সম্পর্কিত কারণে অন্তত আরও ৪ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এতে করে ক্ষুধাজনিত মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩৯ জনে, যার মধ্যে শিশুর সংখ্যা ১০৬। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, খাবারের অভাবে মৃত্যু এখন গাজার মানুষের কাছে যুদ্ধের গোলাগুলির মতোই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, চলমান বোমাবর্ষণ, মৌলিক পরিষেবা ভেঙে পড়া এবং মানবিক সাহায্য বিতরণে কঠোর নিয়ন্ত্রণ—এসবের সমন্বয়ে গাজার খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। বর্তমানে গাজায় অন্তত ৪০ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, পাঁচ বছরের নিচের আড়াই লাখ শিশু খাদ্য ঘাটতির শিকার এবং ১৮ বছরের নিচের প্রায় ১২ লাখ শিশু তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বাস করছে।
এ অবস্থায় ডব্লিউএফপি তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটির মতে, বোমা ও ক্ষুধার দ্বৈত আঘাত থেকে গাজার মানুষকে বাঁচাতে হলে মানবিক করিডর উন্মুক্ত করা এবং পূর্ণ নিরাপত্তায় খাদ্য, ওষুধ ও জরুরি সহায়তা পৌঁছানো এখন সময়ের দাবি।
শুধু খাদ্যসংকট নয়, প্রতিদিনের বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণও গাজাকে মৃত্যুর নগরীতে পরিণত করছে। আল-জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবারই গাজায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৩৫ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ১৩ জন নিহত হয়েছেন মানবিক সহায়তা সংগ্রহের সময়।
এদিকে, পশ্চিম তীরে নতুন করে ৩ হাজারেরও বেশি অবৈধ বসতি নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে ইসরাইল। একইসঙ্গে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ‘গ্রেটার ইসরাইল’ ধারণার প্রতি গভীর সমর্থন জানান এবং নিজেকে ‘ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক মিশনের’ অংশ হিসেবে বর্ণনা করেন। এ মন্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার ঝড় তুলেছে। সৌদি আরব, কাতার, জর্ডান, ইয়েমেনসহ আরব লীগ একযোগে তেল আবিবের এই অবস্থানের নিন্দা জানিয়েছে।
গাজায় এখন প্রতিটি দিনই নতুন দুঃস্বপ্নের মতো—যেখানে একদিকে ক্ষুধা, অন্যদিকে বোমা; আর মাঝখানে আটকে পড়েছে লাখো নিরপরাধ শিশু, নারী ও প্রবীণ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ