
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের শিল্প খাত এক দীর্ঘমেয়াদি সংকটে আটকে পড়েছে। টানা সোয়া পাঁচ বছর ধরে মন্দার রেশ কাটাতে না কাটাতেই যন্ত্রপাতি আমদানি ও এলসি খোলার পরিমাণ আরও কমে গেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মৌলিক শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি ও এলসি খোলা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, যন্ত্রপাতি আমদানির এই ধস আগামী কয়েক মাসে আরও প্রভাব ফেলবে, কারণ এলসি খোলার পর সাধারণত ৩-৬ মাস পরে পণ্য দেশে আসে। ফলে শিল্পের উৎপাদন প্রবৃদ্ধি আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
২০২০ সালের মার্চে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই শিল্প খাত চাপে পড়ে। মহামারি কাটিয়ে ওঠার আগেই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়, যা ডলার সংকটকে তীব্র করে। এতে আমদানি ব্যয় জোগাতে সমস্যা দেখা দেয়।
এরপর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও অস্থিরতা উদ্যোক্তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে তোলে। রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট এবং বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ রেকর্ড পরিমাণে কমে যাওয়া শিল্পের গতি আরও শ্লথ করে দেয়।
এমসিসিআইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যন্ত্রপাতি আমদানি কমে যাওয়া অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক ইঙ্গিত। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমেছে মূলত তিন কারণে—
ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট (পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে ব্যাংক খাতে দুর্নীতির প্রভাব)
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ অনীহা
চার বছর ধরে চলমান সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির ফলে সুদের হার ৮-৯% থেকে বেড়ে ১২-১৮%-এ পৌঁছানো
২০২৪-২৫ অর্থবছরে মৌলিক শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ২৫.৪২% এবং এলসি খোলা কমেছে ২৫.৪১%। বিবিধ শিল্পের সহায়ক যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ১.৮৮% এবং এলসি খোলা কমেছে ০.৫১%।
গার্মেন্ট শিল্প ব্যতিক্রম—যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়েছে ১২.৪১% ও এলসি খোলা বেড়েছে ৩.৮১%। তবে বস্ত্র খাতের আমদানি কমেছে ২৫.৬৮%, ওষুধশিল্পে ৩৫.২৭% এবং চামড়াশিল্পে এলসি খোলা কমেছে ৪৩.৮৫%। প্যাকিং শিল্পের আমদানি কমেছে ৩৫.২৩% এবং অন্যান্য শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৩২.১৯%।
শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে ৮.৩৭%, তবে এর প্রায় সবটাই রপ্তানিমুখী শিল্পে ব্যবহৃত। রপ্তানিমুখী খাতের কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে ১৮.৬২%, ফলে গত অর্থবছরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৮.৬০%। জুলাইয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ২৫%।
তবে অন্যান্য খাতের কাঁচামাল, বিশেষ করে মধ্যবর্তী কাঁচামাল (সিমেন্ট, রিরোলিং মিল, পুরোনো জাহাজ ভাঙা ইত্যাদি) আমদানি কমেছে ৮.৮৫% এবং এলসি খোলা কমেছে ৬.২৬%।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তবে শিল্প খাত নতুন যন্ত্রপাতি বিনিয়োগে আরও পিছিয়ে পড়বে। এর ফলে উৎপাদনশীলতা কমে যেতে পারে এবং দেশের শিল্পায়ন প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়তে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ