
ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে বহুল প্রত্যাশিত আলাস্কা বৈঠক শেষ হলেও ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট সমঝোতা হয়নি। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলা এই বৈঠকের পর উভয় নেতাই যৌথ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে বৈঠককে “ফলপ্রসূ” আখ্যা দিলেও কোনো কার্যকর সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি।
শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে আলাস্কার এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন সামরিক ঘাঁটিতে প্রথমে অবতরণ করে ট্রাম্পকে বহনকারী উড়োজাহাজ। কয়েক মিনিট পর পুতিনকে বহনকারী রুশ প্রেসিডেন্টের বিমানও সেখানে নামে। মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে দুই নেতার জন্য নেয়া হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিমানবন্দরে লালগালিচা বিছিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান ট্রাম্প। পরবর্তীতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সরকারি গাড়িতে একসঙ্গে করে দুই নেতা বৈঠকস্থলের উদ্দেশে রওনা দেন।
বৈঠকটি হয় রুদ্ধদ্বার কক্ষে, যেখানে ট্রাম্প ও পুতিন ছাড়াও উভয় পক্ষ থেকে মাত্র দুইজন করে শীর্ষ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলা আলোচনায় ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি, ন্যাটোর ভূমিকা, ইউরোপীয় দেশগুলোর অবস্থান এবং রাশিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগকে কেন্দ্র করেই বেশির ভাগ সময় আলোচনা চলে। যদিও বৈঠকের কার্যবিবরণী প্রকাশ করা হয়নি, তবে মার্কিন প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, উভয় পক্ষেই কিছু বিষয় নিয়ে নমনীয় মনোভাব দেখা গেলেও যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের মতো সুস্পষ্ট কাঠামো তৈরি হয়নি।
বৈঠক শেষে ট্রাম্প ও পুতিন যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনে আসেন। তবে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়া হয়নি। সেখানে ট্রাম্প বলেন, “আমরা অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি। তবে ইউক্রেন সংকট সমাধানের আগে কোনো লিখিত বা আনুষ্ঠানিক চুক্তি করা সম্ভব নয়।” তিনি আরও জানান, পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে ইউক্রেন সরকার ও ন্যাটোর সঙ্গে পৃথক আলোচনা করা হবে।
অন্যদিকে, পুতিন বলেন, “এই যুদ্ধ বন্ধ করতে হলে মূল কারণগুলো সমাধান করতে হবে। কেবল যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করলেই সমস্যার সমাধান হবে না।” তিনি ট্রাম্পকে দ্বিতীয় দফার বৈঠকের জন্য মস্কো সফরে আমন্ত্রণ জানান এবং ইউরোপ ও ইউক্রেনকে ‘আলোচনায় বাধা না দিতে’ সতর্ক করেন।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠক প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। অনেকের মতে, এটি ছিল কেবল দুই নেতার অবস্থান স্পষ্ট করার সুযোগ, কার্যকর কোনো চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা এখনো অনেক দূরে। তবুও কূটনৈতিকভাবে বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ রাশিয়া-আমেরিকার সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই অবিশ্বাস ও উত্তেজনার মধ্যে আটকে ছিল।
সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রথমে পুতিন এবং প্রায় ১০ মিনিট পর ট্রাম্প নিজ নিজ বিমানে চড়ে আলাস্কা ত্যাগ করেন। বিশ্বের চোখ এখন তাদের পরবর্তী বৈঠক এবং ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক পদক্ষেপের দিকে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ