
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশ আর কখনো পথভ্রষ্ট হবে না, এবার সঠিক দিকেই এগোবে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি বলেছেন, বৈধতা ছাড়া কোনো নির্বাচনেরই অর্থ নেই। তাই তার লক্ষ্য হলো একটি গ্রহণযোগ্য, পরিচ্ছন্ন এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা।
সম্প্রতি মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর সফরে গিয়ে সিঙ্গাপুরভিত্তিক চ্যানেলনিউজএশিয়া (সিএনএ)-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি জানান, ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করতে চায়।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন— “আমার কাজ হলো একটি গ্রহণযোগ্য, পরিচ্ছন্ন ও উপভোগ্য নির্বাচন করা। যদি বৈধ না হয়, তাহলে নির্বাচন আয়োজনের কোনো মানেই নেই।”
সিএনএর প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়। নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতি তৈরি হয়। অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে ব্যাপক দমননীতি, দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং স্বৈরশাসনের কারণে গণঅভ্যুত্থান ঘটে। ফলস্বরূপ তার ১৫ বছরের শাসনের পতন ঘটে এবং তিনি ভারতে পালিয়ে যান।
অভিযোগ রয়েছে, তার নির্দেশেই ওই সহিংসতায় প্রায় এক হাজার প্রাণহানি ঘটেছিল। এ ঘটনার বিচার এখনো চলছে, যদিও শেখ হাসিনা অনুপস্থিত।
ইউনূস সাক্ষাৎকারে বলেন, শেখ হাসিনা ভারত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। এ কারণে বাংলাদেশ সরকার ভারতকে অনুরোধ করেছিল তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন, তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। একইসঙ্গে শেখ হাসিনাকে প্রত্যাবাসনের অনুরোধও ভারত প্রত্যাখ্যান করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের লক্ষ্য কোনো সংঘাতে জড়ানো নয়। বরং হাসিনা ভারতে থাকতেই পারেন, তবে তার প্রভাব দিয়ে যেন দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি না হয় সেটিই মূল বিষয়।
গত মাসে চীন সফরে গিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ড. ইউনূস। সেখানে বাংলাদেশের ভূ-কৌশলগত অবস্থানকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রবেশদ্বার হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
পাকিস্তান, চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক স্বার্থ ও বিনিয়োগের সুযোগের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বাংলাদেশের দরজা সবার জন্য খোলা—চাইলে ভারত, চীন কিংবা অন্য যেকোনো দেশ বিনিয়োগ করতে পারে।
জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর ছাত্রনেতাদের অনুরোধেই তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন বলে জানান। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের পর সরকারে থাকার কোনো পরিকল্পনা তার নেই। তবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন—“এখন থেকে বাংলাদেশ সঠিক পথে থাকবে, আর কখনো পথভ্রষ্ট হবে না।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ