
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ক্রিকেটের নির্ভরযোগ্য অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ। টেস্ট ও ওয়ানডে ফরম্যাটে তার ধারাবাহিকতা ও কার্যকারিতা দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে সাম্প্রতিককালে তাকে টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে দেখা যাচ্ছে না। আরব আমিরাত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে আসন্ন টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলেও জায়গা হয়নি মিরাজের। এই সিদ্ধান্ত ঘিরে ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে কৌতূহল ও প্রশ্ন। ঠিক কেন জাতীয় দলের এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়া হলো?
এই প্রশ্নের উত্তর মিলেছে রোববার শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের কনফারেন্স হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে। নির্বাচক প্যানেলের প্রধান গাজী আশরাফ হোসেন লিপু সরাসরি এ প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে দিয়েছেন বিস্তারিত ব্যাখ্যা। তার বক্তব্যে উঠে এসেছে ইনজুরি, ফরম্যাটভিত্তিক পরিকল্পনা, স্কোয়াড কম্বিনেশন এবং পরিসংখ্যানভিত্তিক বিশ্লেষণ।
লিপু অকপটে স্বীকার করেন, “মিরাজ আমাদের জাতীয় দলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারদের একজন। বিশেষ করে টেস্ট ও ওয়ানডে ফরম্যাটে তার অবদান অসামান্য। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়েও তার অবস্থান সেটা প্রমাণ করে।”
তবে টি-টোয়েন্টি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে নির্বাচকদের ভিন্ন চিন্তা। মিরাজকে এই ফরম্যাটে এখন কিছুটা ‘পেছনে রাখা’ হয়েছে বলেই ইঙ্গিত দেন তিনি। “শুধু জাতীয় দলেই নয়, বিশ্বকাপের ক্ষেত্রেও আমরা তাকে কিছুটা পিছিয়ে রেখেছিলাম,”—বলেছেন লিপু।
একই সঙ্গে ইনজুরির প্রসঙ্গও আনেন প্রধান নির্বাচক। তার ভাষায়, “একজন ক্রিকেটার যদি ইনজুরিতে পড়ে যান, তাহলে তিন ফরম্যাটেই তার পারফরম্যান্সে ছেদ পড়ে। সেটিও আমরা বিবেচনায় রেখেছি।”
তবে নির্বাচনের মূল কারণ ছিল কৌশলগত ও স্কোয়াড কাঠামোর বিষয়। লিপু বলেন, “টি-টোয়েন্টিতে আমরা পাঁচ বোলার খেলাতে চাই, যাদের প্রত্যেককে ৪ ওভার বোলিং করতে হবে। এই জায়গায় শেখ মেহেদি কিছুটা এগিয়ে আছে। পাশাপাশি নাহিদ রানা পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) খেলে ফিরবে, কিন্তু সে কবে নাগাদ দলে যোগ দেবে, তা নিশ্চিত নয়। এজন্য বাড়তি একজন পেসার রাখতে হয়েছে।”
নাহিদ রানার অনুপস্থিতি থাকলে ব্যাটসম্যান বাড়িয়ে স্কোয়াড ভারসাম্য আনা যেত বলে জানান তিনি। “নাহিদ থাকলে পাঁচজন পেসারের বদলে চারজনেই চলত। তখন আমরা মিডল অর্ডারে আরও একজন ব্যাটার রাখতে পারতাম,”—জানান লিপু।
তিনি আরও যোগ করেন, “লিটন দাস তিন নম্বরে খেলবে বলে ধরে নিচ্ছি। তখন মিডল অর্ডারে তাওহিদ হৃদয়, শামীম হোসেন ও অনিক থাকবে। সবার জন্য জায়গা করে দেওয়াটা চ্যালেঞ্জ।”
তবে মিরাজকে পুরোপুরি বাদ দেওয়া নয়, বরং তার অবস্থানকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধান নির্বাচক। “সুযোগ থাকলে আমি মিরাজকে দলে নিতাম। তিনি আমাদের টি-টোয়েন্টির পরিকল্পনায় একটু পিছিয়ে থাকলেও, যে কোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার জন্য দারুণ একজন ক্রিকেটার। আমরা তাকে খেলার মধ্যে রাখব যেন সে ফরম্যাটের বাইরে না থাকে।”
এই পর্যায়ে এসে একটি প্রশ্ন সামনে আসে—মিরাজের পরিসংখ্যান কী বলছে?
জাতীয় দলের হয়ে সর্বশেষ ২২ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মাত্র একবার তিনি পুরো ৪ ওভার বোলিং করেছেন। বাকি ২১ ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে তাকে বোলিংই করা হয়নি। ১৮ ম্যাচে তিনি কখনও ১ ওভার, কখনও ২ ওভার বা ৩ ওভারের বেশি পাননি। নির্দিষ্টভাবে বলা যায়, ৮ ম্যাচে তিনি ২ ওভার, ৬ ম্যাচে ১ ওভার, এবং ৪ ম্যাচে ৩ ওভার করে বোলিং করেছেন।
এর অর্থ দাঁড়ায়, তাকে পুরো চার ওভার বোলিং করানোর মতো আস্থা রাখেননি টিম ম্যানেজমেন্ট, কিংবা ম্যাচ পরিস্থিতি সেটার অনুমতি দেয়নি। তার বোলিংয়ের গুরুত্ব টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ক্রমেই কমে গেছে।
সব মিলিয়ে মেহেদি হাসান মিরাজকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি একক কোনো সিদ্ধান্ত নয়, বরং পরিসংখ্যান, কৌশল, স্কোয়াড ভারসাম্য এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মিলিয়ে গঠিত একটি যৌথ সিদ্ধান্ত।
তবে ক্রিকেট হলো সম্ভাবনার খেলা। সুযোগ মিললে এবং ফর্ম ও ফিটনেস ধরে রাখলে মিরাজের ফেরার পথ এখনও খোলা। নির্বাচকদের কথায় তা স্পষ্টভাবেই উঠে এসেছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ