
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নতুন যুগের সূচনা হলো উইকেটকিপার-ব্যাটার লিটন কুমার দাসের নেতৃত্বে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত তাকে পূর্ণকালীন অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে। এই ঘোষণার পরপরই রোববার (৪ মে) বিসিবি প্রকাশ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তান সফরের জন্য ১৫ সদস্যের টি-টোয়েন্টি দল। দুটো গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সফরের মাধ্যমে শুরু হচ্ছে লিটনের নেতৃত্বে টাইগারদের নতুন পথচলা।
এশিয়ার দুটি ভিন্ন ভৌগোলিক এবং কন্ডিশনভিত্তিক পরিবেশে খেলার মাধ্যমে এই সিরিজগুলো একদিকে যেমন বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ, অন্যদিকে লিটনের কৌশলগত নেতৃত্ব দক্ষতা যাচাইয়ের বড় সুযোগ। বিসিবি'র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমানে দলে থাকা খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতা, সাম্প্রতিক ফর্ম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ভিত্তিতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ দল গঠন করা হয়েছে।
দলের কাঠামো ও আলোচিত অনুপস্থিতি
চোটের কারণে দলের বাইরে আছেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান পেসার তাসকিন আহমেদ। বর্তমানে তিনি ইংল্যান্ডে চিকিৎসাধীন। বিসিবি চিকিৎসক দল জানিয়েছে, তার সুস্থতা নিশ্চিত করতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। তার অনুপস্থিতিতে পেস আক্রমণের মূল দায়িত্ব সামলাবেন অভিজ্ঞ মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম এবং উদীয়মান পেসাররা, যেমন—তানজিম হাসান সাকিব ও নাহিদ রানা। এই পরিস্থিতিতে পেস বিভাগে রোটেশনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
নতুন ও পুরোনোদের সমন্বয়
এই স্কোয়াডে বড় কোনো চমক না থাকলেও রয়েছে অভিজ্ঞতা ও তরুণ প্রতিভার চমৎকার সংমিশ্রণ। লিটন দাসের নেতৃত্বে ব্যাটিং বিভাগের উদ্বোধনী জুটিতে থাকছেন তানজিদ হাসান তামিম ও পারভেজ হোসেন ইমন, যারা ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক ভালো পারফর্ম করছেন। মিডল অর্ডারে শক্তি যোগাচ্ছেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও অভিজ্ঞ সৌম্য সরকার। অলরাউন্ডার হিসেবে রাখা হয়েছে শামীম পাটোয়ারী, শেখ মেহেদী হাসান ও তানভীরুল ইসলামকে।
উইকেটকিপিংয়ের দায়িত্বে লিটন দাসের পাশাপাশি আছেন তরুণ জাকের আলী অনিক, যিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে উইকেটের পেছনে ও ব্যাট হাতে নজর কেড়েছেন। স্পিন আক্রমণে ভরসা রিশাদ হোসেন ও শেখ মেহেদী—যাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স নির্বাচকদের আস্থা অর্জন করেছে।
সিরিজ সূচি: ভিন্ন চ্যালেঞ্জ, বড় প্রস্তুতি
বাংলাদেশের এই সফর শুরু হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে। ম্যাচ দুটি অনুষ্ঠিত হবে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে, যথাক্রমে ১৭ ও ১৯ মে। আরব আমিরাতের মতো উপমহাদেশীয় আবহাওয়ায় খেলা হলেও, এই ভেন্যুতে রাত্রিকালীন ম্যাচে কন্ডিশনের হঠাৎ বদল, শিশির ও উইকেটের গতি টাইগারদের পরীক্ষা নেবে।
এরপর সফরের সবচেয়ে কঠিন অংশ—পাকিস্তান অ্যাওয়ে সিরিজ। সফরের দ্বিতীয় ধাপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হবে শক্তিশালী পাকিস্তান দল, যাদের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ অনুষ্ঠিত হবে পাকিস্তানের দুটি শহরে। প্রথম দুটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ফয়সালাবাদে (২৫ ও ২৭ মে), এরপর সিরিজের বাকি তিনটি ম্যাচ (৩০ মে, ১ জুন ও ৩ জুন) হবে রাওয়ালপিন্ডিতে, যা পাকিস্তানের অন্যতম ঘরোয়া শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।
এই সফর শুধুই সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নয়, বরং ২০২৬ বিশ্বকাপের আগে একটি দীর্ঘমেয়াদী দল গঠনের প্রক্রিয়া ও কৌশলগত প্রস্তুতির অংশ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
ঘোষিত স্কোয়াড:
লিটন কুমার দাস (অধিনায়ক)
তানজিদ হাসান তামিম
পারভেজ হোসেন ইমন
সৌম্য সরকার
নাজমুল হোসেন শান্ত
শামীম পাটোয়ারী
জাকের আলী অনিক
রিশাদ হোসেন
শেখ মেহেদী হাসান
তানভীরুল ইসলাম
মোস্তাফিজুর রহমান
হাসান মাহমুদ
তানজিম হাসান সাকিব
নাহিদ রানা
শরিফুল ইসলাম
বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বাংলাদেশের এই নতুন নেতৃত্বের শুরুতেই চ্যালেঞ্জিং দুই সফর নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। বিসিবি এবার লিটনের ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে ভবিষ্যতের জন্য একটি ধারাবাহিক এবং অভিজ্ঞ দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। যদি লিটন এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন, তবে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী টি-টোয়েন্টি ইউনিট গড়ে তুলতে পারবে।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নেতৃত্বের পাশাপাশি দলীয় মানসিকতা, পরিকল্পনার বাস্তবায়ন এবং ফিল্ডিং বিভাগে ধারাবাহিক উন্নয়ন না এলে শুধু স্কোয়াড ঘোষণা দিয়েই টি-টোয়েন্টিতে সাফল্য আসবে না। এখন দেখার বিষয়, নতুন নেতৃত্বে বাংলাদেশ কতটা আত্মবিশ্বাস ও কার্যকর পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ