
ছবি: সংগৃহীত
শারজাহের মরুভূমির উষ্ণ পরিবেশে শুক্রবার রাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল লিখে দিল আরেকটি উজ্জ্বল অধ্যায়। তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় খেলায় আফগানিস্তানকে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে ২ উইকেটে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই নিশ্চিত করেছে সিরিজ জয়। শেষ ওভারের রোমাঞ্চে শরীফুল ইসলামের ব্যাট থেকে আসা দারুণ এক চার টাইগারদের শুধু ম্যাচ জিতিয়েই দেয়নি, বরং ২–০ ব্যবধানে সিরিজ নিশ্চিত করেছে।
১৪৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শেষ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ছিল মাত্র ২ রান। কিন্তু হাতে তখন কেবল দুই উইকেট। ক্রিজে ছিলেন উইকেটকিপার-ব্যাটার নুরুল হাসান সোহান এবং দশ নম্বরে নামা শরীফুল ইসলাম। দর্শক গ্যালারি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে অপেক্ষা করছিল—কী হবে শেষ দৃশ্য? আজমতউল্লাহ ওমরজাই প্রথম বল ছুড়তেই শরীফুল ঠান্ডা মাথায় দুর্দান্ত চার হাঁকিয়ে ম্যাচের সমাপ্তি ঘটান। এই এক শটে বাংলাদেশ শুধু ম্যাচই জেতেনি, সিরিজও নিজেদের করে নিয়েছে।
শরীফুলের ইনিংস ছোট হলেও প্রভাব ছিল বিশাল। মাত্র ৬ বলে ১১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে তিনি নায়ক হয়ে যান। অপর প্রান্তে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ছিলেন সোহান, ২১ বলে হার না মানা ৩১ রান করে দলের জয় নিশ্চিত করেন।
তবে ম্যাচের শুরুটা একেবারেই সুখকর ছিল না বাংলাদেশের জন্য। ওপেনিং জুটিতে আবারও ব্যর্থতা। তানজিদ হাসান তামিম ও পারভেজ হোসেন ইমন—দুজনেই ফেরেন মাত্র ২ রান করে। কিছুটা সময় টিকলেও সাইফ হাসান থামেন ১৮ রানে। স্কোরবোর্ডে তখন মাত্র ২৪ রান, হাতে নেই তিন উইকেট।
এ অবস্থায় দলকে বিপদমুক্ত করতে এগিয়ে আসেন অধিনায়ক জাকের আলী ও শামীম পাটোয়ারী। চতুর্থ উইকেটে দুজন মিলে গড়েন ৫০ রানের জুটি। জাকের ২৫ বলে ৩২ রান করেন, শামীম খেলেন ৩৩ রানের ইনিংস। কিন্তু দুজনের বিদায়ের পর আবার ভেঙে পড়ে বাংলাদেশ। রশিদ খানের ঘূর্ণিতে পরপর উইকেট হারিয়ে টাইগাররা চলে যায় চাপে। ১২৯ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে তখন দলের পরাজয় প্রায় নিশ্চিত মনে হচ্ছিল।
কঠিন সেই মুহূর্তে আবারো হাল ধরেন নুরুল হাসান সোহান। আগের ম্যাচেও তিনি দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দলকে জিতিয়েছিলেন। এবারও খেলেন শান্ত-স্থির ইনিংস। সঙ্গী পান শরীফুল ইসলামকে। দুইজন মিলে শেষ ১২ বলে ১৯ রানের কঠিন সমীকরণ সহজ করে ফেলেন। শরীফুল সাহসী শট খেললে সোহান খেলে যান হিসেবি ব্যাটিং। দুজনের অটল লড়াইয়ে ৫ বল হাতে রেখেই জয় পায় বাংলাদেশ।
এর আগে টস জিতে বল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক জাকের আলী। আফগান ওপেনার সেদিকুল্লাহ আতাল ও ইব্রাহিম জাদরান সতর্ক সূচনা করেন। প্রথম ৬ ওভারে দলীয় সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩৫। তরুণ লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন বল হাতে এসে ভাঙেন উদ্বোধনী জুটি। আতাল ফেরেন ২৩ রানে।
জাদরানও বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন, ধীর ব্যাটিংয়ে ৩৭ বলে ৩৮ রান করে আউট হন নাসুম আহমেদের বলে। এরপর একে একে তারাখিল (১) ও গুরবাজ (৩০) ফিরে গেলে চাপে পড়ে আফগানিস্তান। তবে শেষদিকে অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নবি ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন। নবি খেলেন ১২ বলে ২০ রানের ইনিংস, অপরদিকে ওমরজাই অপরাজিত থাকেন ১৭ বলে ১৯ রান করে। তাদের সুবাদেই আফগানিস্তান সংগ্রহ করে লড়াই করার মতো ১৪৭ রান।
বাংলাদেশের হয়ে রিশাদ ও নাসুম নেন ২টি করে উইকেট। শরীফুল শিকার করেন গুরুত্বপূর্ণ উইকেট।
বল হাতে আফগানিস্তানের সেরা ছিলেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। তিনি ৪টি উইকেট শিকার করেন। রশিদ খান নেন ২ উইকেট। নূর আহমেদ ও মুজিব উর রহমান পান একটি করে উইকেট। তবে ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে তাদের বোলিং নৈপুণ্য বৃথা যায়।
এই জয়ের ফলে তিন ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ এগিয়ে গেল ২–০ ব্যবধানে। ফলে শেষ ম্যাচটি হয়ে গেল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। সিরিজের প্রথম ম্যাচেও বাংলাদেশ দারুণ লড়াই করে জয় পেয়েছিল, এবারও দেখালো দৃঢ় মানসিকতা। টানা দুই ম্যাচ জিতে টাইগাররা আবারো প্রমাণ করল, তারা এখন যে কোনো পরিস্থিতিতে লড়াই করে জিততে পারে।
বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ ম্যাচ শেষে বলেন, “খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। সোহান ও শরীফুল শেষ পর্যন্ত যে ধরনের লড়াই করল, সেটি দলকে সিরিজ জেতাতে সাহায্য করেছে। এটি ভবিষ্যতের জন্যও ভালো বার্তা।”
বাংলাদেশ ক্রিকেটে এই সিরিজ জয় নিঃসন্দেহে একটি বড় প্রাপ্তি। বিশেষ করে যখন দল বারবার চাপের মুখে পড়েও হাল ছাড়েনি। শরীফুল ইসলামের শেষ শট হয়ে থাকবে স্মরণীয়। আর সোহানের শান্ত-স্থির ব্যাটিং দলের ভরসার নাম হয়ে উঠেছে। শারজাহের মরুভূমি সাক্ষী রইল আরেকটি রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের, যেখানে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করল টাইগাররা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ