
ছবি: সংগৃহীত
মুহাম্মদ জাকির হোসেন। তিনি মোংলা কাস্টম হাউসের একজন সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা। ১১ মাস ধরে তিনি মোংলা কাস্টম হাউসে রয়েছেন। এই ১১ মাসে ঘুষের হাট বসিয়ে অবৈধভাবে আয় করেছেন প্রায় কোটি টাকা। মোংলা কাস্টম হাউসে পদস্থ হওয়ার আগে তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম ভ্যাটে। সেখানেও তার বিরুদ্ধে ছিলো ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ৫ ডিসেম্বর এনবিআর তাকে বদলি করে মোংলা কাস্টম হাউসে দেয়। আর এই মোংলা বদলি হয়ে তিনি ঘুষের স্বর্গরাজ্য বানিয়ে ফেলেছেন। তার হাত থেকে রেহাই মেলে কারও। তার ফাইল আটকে তার ঘুষের রেট সর্বনিম্ন ৫ লাখ টাকা।
তার ঘুষ ও দুর্নীতির এমন অভিযোগ এসেছে বাংলাবার্তার কাছে। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে ব্যবসায়ী মহল থেকে এই সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
জানা যায়, এই সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তার চলাফেরা ক্যাডার কর্মকর্তার মতো। উর্ধ্বতন কর্মকর্তা যেন তার কাছে চুনোপুঁটি। ব্যবসায়ী থেকে সিঅ্যান্ডএফ তার কাছে কিচ্ছু না। সবাই যেন তার বাড়ির চাকর। কাগজ ঠিক থাকলেও তার কাছে সবই ভুয়া। কাগজ আটকে রাখা, ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফদের হয়রানি তার নেশায় পরিণত হয়েছে। মূলত ঘুষ না দিলে তার হাত থেকে কারও রেহাই মেলে না। আর তার সর্বনিম্ন ঘুসের রেট ৫ লাখ টাকা। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনাকেও তিনি থোড়াই কেয়ার করেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, জাকির মোংলা কাস্টম হাউসে যোগদানের পর থেকে একাধিক ব্যবসায়ীকে ঘুষের জন্য হয়রানি করেছেন। যোগদানের পরপরই এক ব্যবসায়ীর সব কাগজ ঠিক থাকার পরও জাকিরকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। এরপরও জাকির এই ব্যবসায়ীর কোন বিল অব এন্ট্রি পড়লে হয়রানি শুরু করেন। তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে রাজস্ব কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কমিশনার পর্যন্ত-কারো নির্দেশনা মানতে চান না জাকির। উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে বারবার সাবধান করলেও সে শোধরাইনি। উল্টো ঘুসের জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
আবার এমনও হয়েছে, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে ঘুস নিয়ে তা মেরে দিয়েছেন জাকির-এমন ঘটনাও ঘটেছে মোংলা কাস্টম হাউসে। ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা জাকিরের নামে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে একাধিকবার বিচার দিলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
অপরদিকে অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, মুহাম্মদ জাকির হোসেন মোংলা কাস্টম হাউসে যোগদানের পর থেকে ঘুস নিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেন। সে তার সহকর্মী ও ব্যবসায়ীদের বলে বেড়ায়, ১০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে মোংলা কাস্টম হাউসে বদলি হয়ে এসেছেন। সেই টাকা তার তুলতে হবে। আর কোন কাস্টম হাউসে পোস্টিং পাবেন কিনা জানেন না। এই হাউস থেকে মোটা অংকের টাকা তুলে নিতে হবে তার। সেজন্য ব্যবসায়ীদের কাগজ ঠিক থাকুক আর নাই থাকুক, ৫ লাখ টাকার নিচে তিনি ঘুষ নেন না। এমন উক্তি তিনি তার সহকর্মী ও ব্যবসায়ীদের সব সময় বলে বেড়ান। কাগজ ঠিক থাকলেও হয়রানি আর পোর্ট চার্জের ভয়ে ব্যবসায়ীরা জাকিরকে ঘুষ দিতে বাধ্য হন। ঘুষ নেয়া যেন জাকিরের অধিকারে পরিণত হয়েছে। এযেন তার পৈত্রিক সম্পত্তি।
অভিযোগে আরও বলা হয়, জাকির প্রতি ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ থেকে চালান প্রতি ৫ লাখ টাকার উপরে ঘুষ নেন। সে হিসেবে ১১ মাসে অন্তত কোটি টাকা ঘুষ হিসেবে নিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের হয়রানির মাধ্যমে এই ঘুষ নিয়েছেন। মোংলা কাস্টম হাউসে যে শাখায় বদলি করা হয়েছে, সেই শাখায় জাকির ঘুষের দোকান খুলে বসেছেন। অপরদিকেবন্দর থেকে পণ্য চুরি সিন্ডিকেটের সঙ্গেও জাকিরের যোগাযোগ রয়েছে। এই চোর চক্র থেকে জাকির টাকা নেন বলেও বন্দরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
মোংলা বন্দরে ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার ঘুষের দোকান থেকে বাঁচাতে এনবিআর চেয়ারম্যানের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছেব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে।
এই বিষয়ে মোংলা কাস্টম হাউসের একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জাকির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা তেমন মানেন না। ঘুষ নিয়ে হয়রানির একাধিক অভিযোগ শুনেছি। তবে হাউস থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে কেন নেওয়া হয়নি সেটা তার জানা নেই।
অপরদিকে তার ব্যক্তিগত নাম্বারে ফোন দেওয়া হলে তার নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায় ফলে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।