
ছবি: সংগৃহীত
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আজ সোমবার শুরু হচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ এক সংলাপ, যেখানে অংশ নেবেন দেশের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিকরা। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশন যে ধারাবাহিক আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে, তারই অংশ এই সংলাপ।
আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হবে। এরপর দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় পর্ব।
এই সংলাপে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। কমিশনের কর্মকর্তাদের মতে, গণমাধ্যমের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার এই উদ্যোগ নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনের আয়োজন নিশ্চিত করতে কমিশন ইতোমধ্যে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে একাধিক সংলাপ আয়োজন করেছে। এসব সংলাপে রাজনৈতিক দল, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, নারী নেত্রী, মুক্তিযোদ্ধা ও পর্যবেক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধি—সকলের মতামত গ্রহণ করছে ইসি।
গণমাধ্যমের সঙ্গে আজকের সংলাপ সেই ধারাবাহিক আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কমিশন মনে করছে, গণমাধ্যম নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সবচেয়ে কার্যকর সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করতে পারে—যেখানে জনগণ সরাসরি নির্বাচনের খুঁটিনাটি জানতে পারে এবং ভোটের দিন পর্যন্ত পরিস্থিতির স্বচ্ছ চিত্র পায়।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া অংশীজন সংলাপের প্রথম দিনে ইসি বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে। সেদিন অংশগ্রহণকারীরা একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের স্বার্থে সকল প্রার্থী ও ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জোর দেন।
তারা বলেন, একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে স্বচ্ছ ও মুক্ত গণমাধ্যম অপরিহার্য। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ থাকতে হবে। ভোটগ্রহণের দিন মাঠপর্যায়ে সংবাদকর্মীরা যেন নির্ভয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন, সেজন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্ব নিতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গণমাধ্যমের ভূমিকা নির্বাচনকালীন সময়ে কেবল সংবাদ প্রচারে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি আস্থা ও স্বচ্ছতার অন্যতম ভিত্তি। ভোটের আগে প্রচারণা পর্যবেক্ষণ, প্রার্থী যাচাই, ব্যালট ব্যবস্থাপনা, ভোটের দিন নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং ফলাফল ঘোষণার সময় পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই গণমাধ্যমের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে কমিশন বিশেষ ব্যবস্থা নিতে চায়।
ইসি মনে করছে, নির্বাচনকালীন সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া খবর বা বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিস্তার রোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই আজকের সংলাপে সংবাদকর্মীদের কাছ থেকে কমিশন জানতে চায়—কীভাবে সংবাদমাধ্যম ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে তথ্য বিনিময় আরও গতিশীল ও কার্যকর করা যায়।
আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কমিশন ইতোমধ্যে ভোটকেন্দ্র চূড়ান্তকরণ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, পর্যবেক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নে কাজ করছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে নির্বাচনী আচরণবিধি, ভোটের দিন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা, পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা এবং প্রবাসী ভোটারদের অংশগ্রহণ নিয়েও আলোচনা চলছে।
সিইসি নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে কমিশন নির্বাচনী কার্যক্রমকে সর্বজনীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে একাধিক কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। কমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “আমরা চাই নির্বাচন যেন শুধু প্রার্থীদের প্রতিযোগিতা না হয়ে, জনগণের অংশগ্রহণের উৎসবে পরিণত হয়। গণমাধ্যম এই কাজের সবচেয়ে বড় অংশীদার।”
বিভিন্ন গণমাধ্যম সম্পাদক ও সাংবাদিকরা এরই মধ্যে জানিয়েছেন, তাঁরা চান নির্বাচনকালীন সময়ে সংবাদ প্রচারে যেন কোনো প্রকার বাধা না আসে। তাঁদের মতে, নির্বাচনের প্রস্তুতি থেকে ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপের তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
তারা বলেন, “যদি কমিশন সব তথ্য উন্মুক্ত রাখে এবং সাংবাদিকদের মাঠে নির্ভয়ে কাজ করতে দেয়, তবে জনগণের আস্থা বাড়বে এবং ভোটের পরিবেশও শান্তিপূর্ণ থাকবে।”
আজকের এই সংলাপকে বিশ্লেষকরা নির্বাচনের প্রাক্কালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময়গুলোর একটি হিসেবে দেখছেন। এটি কেবল ইসির পরিকল্পনা নয়, বরং সাংবাদিক সমাজের সঙ্গে এক ধরনের সমঝোতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা—যাতে গণমাধ্যম নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে পারে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, সংলাপে সংবাদকর্মীদের দেওয়া প্রস্তাব ও পরামর্শগুলো লিখিত আকারে সংরক্ষণ করা হবে এবং পরবর্তীতে নীতিমালায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়েও বিবেচনা করা হবে।
আজকের এই সংলাপের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন তাদের চলমান পরামর্শ ও আলোচনার প্রক্রিয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অতিক্রম করতে যাচ্ছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, গণমাধ্যমের সঙ্গে এই আলোচনা নির্বাচনী স্বচ্ছতা, আস্থা ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধির পথে একটি তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নেবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ