
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাব বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জুলাই সনদ এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে দলের অবস্থান এখনো অনড়। বিএনপি ও এর মিত্র দল-জোটগুলো দাবি করছে, সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো জাতীয় নির্বাচনের পর, নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে কার্যকর করা হবে। অন্যদিকে, জামায়াত ও চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল দাবি করছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রস্তাবগুলো কার্যকর করা হোক এবং নির্বাচনের ভিত্তি হিসেবে এটি প্রযোজ্য হোক।
সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে দলগুলোর অবস্থান অনড় থাকায় ঐকমত্য কমিশন আজ রবিবার চূড়ান্ত পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত করতে যাচ্ছে। বৈঠক বেলা সাড়ে ১১টায় ফরেন সার্ভিস একাডেমি, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকে কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সম্ভাব্য পদ্ধতি চূড়ান্ত করার চেষ্টা করবে।
গতকাল শনিবার, চূড়ান্ত পর্বের প্রস্তুতির জন্য কমিশনের অভ্যন্তরীণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সম্ভাব্য উপায়, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত এবং মুলতবি বৈঠকে আলোচিত বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনা করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে বিএনপি এবং জামায়াতের অবস্থান পূর্ণ বিপরীতমুখী।
-
বিএনপি দাবি করছে, সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাব জাতীয় সংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে, যা ভবিষ্যতে সংশোধন নিয়ে বিতর্ক এড়াবে। প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়া যেতে পারে।
-
জামায়াত চায় জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রস্তাবগুলো কার্যকর হোক। দলটি সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার সংবিধান আদেশ জারি এবং গণভোটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে চায়।
-
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চায়, প্রস্তাবগুলো গণপরিষদের মাধ্যমে কার্যকর হোক, যেখানে নির্বাচিত সংসদ একসঙ্গে গণপরিষদ হিসেবে কাজ করবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “সংবিধান পরিবর্তনের জন্য বৈধ আইনানুযায়ী প্রক্রিয়া ছাড়া কেউ কোনো অধিকার রাখে না। সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠন দেখা হয়েছে, যা আমরা বৈধ মনে করি।” তিনি আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থান ও জনগণের অভিপ্রায় বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ঐকমত্য কমিশন বৈঠকে আলোচনা করা হয়েছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য সম্ভাব্য চারটি উপায়—
সংবিধান আদেশ জারি: জুলাই ঘোষণাপত্রের ২২ দফা অনুসরণ করে একটি ‘সংবিধান আদেশ’ কার্যকর করা।
গণভোট: জনগণের অনুমোদনের মাধ্যমে সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাব বৈধ করা।
গণপরিষদ গঠন: নির্বাচিত সংসদ একসঙ্গে গণপরিষদ হিসেবে কাজ করবে।
সুপ্রিম কোর্টের মতামত: সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে সুপ্রিম কোর্টের মতামত গ্রহণ।
বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, সংবিধান আদেশ জারি করে গণভোটের মাধ্যমে প্রস্তাবগুলো বৈধ করা যেতে পারে। গণভোটের আয়োজন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একত্রে করা সম্ভব।
ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য, ১০ অক্টোবরের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি সংক্রান্ত সুপারিশ চূড়ান্ত করে সরকারকে উপস্থাপন করা। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে সব দলের স্বাক্ষরের মাধ্যমে সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এই সময়সীমার মধ্যে কমিশন তাদের দায়িত্ব শেষ করতে চায়।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে মতভিন্নতা রাজনৈতিক ও সংবিধানগত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার ও প্রস্তাব বাস্তবায়ন কবে এবং কিভাবে হবে তা দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইনগত কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত।
-
বিএনপি ও মিত্র দলগুলো চায়, জাতীয় সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হোক।
-
জামায়াত ও চরমোনাই পীরের দল নির্বাচনের আগে কার্যকর ও সংবিধান আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন চায়।
-
এনসিপি গণপরিষদের মাধ্যমে সমন্বিত বাস্তবায়ন সমর্থন করছে।
আজ ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে দলগুলো তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, সুপ্রিম কোর্টের মতামত, সংবিধান আদেশ, গণভোট ও গণপরিষদ—সবকিছু মিলিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কার ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ