ছবি: বাংলাবার্তা
স্বামী-স্ত্রী ভালোবাসার দুটি মানুষ। তাইতো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বামী-স্ত্রীর অধিকারসমূহের আলোচনাকালে স্ত্রীর প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন যে, শরীয়তে যদি আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কাউকে সিজদা করার অনুমতি থাকত, তাহলে স্বামীকে সিজদা করার জন্য স্ত্রীকে নির্দেশ প্রদান করা হতো।
হাদিস শরিফে এসেছে, যে নারী শরীয়তের ফরজ বিধানসমূহ পালন করে এবং স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের দ্বার উন্মুক্ত করে দেবেন, যাতে সে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে।
হাদিসে আরও বর্ণিত আছে, কোনো বৈধ কারণে যদি স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়, আর সেই স্ত্রী জিদের বশবর্তী হয়ে স্বামীর ডাকে সাড়া না দেয়, আর এমতাবস্থায় স্বামী ঘুমিয়ে পড়ে, তাহলে ফিরিশতাগণ সারা রাত সেই স্ত্রীর ওপর লানত বর্ষণ করতে থাকেন। সুতরাং যেন স্বামীর সন্তুষ্টিতেই আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি বিদ্যমান রয়েছে। স্বামীর আনুগত্যের ক্ষেত্রে স্ত্রী সাহাবীদের জীবনের ঘটনাগুলো বড়ই শিক্ষণীয়।
স্বামীর প্রেমে একজন স্ত্রী সাহাবীর আশ্চর্যজনক ঘটনা
জনৈক সাহাবী জিহাদে গমন করলেন। এদিকে তার স্ত্রী একটি পুত্র সন্তান প্রসব করে। জিহাদ শেষে স্বামী যেদিন প্রত্যাবর্তন করবে সে দিনই স্বামীর আসার কয়েক ঘণ্টা পূর্বে তার শিশু সন্তানটির মৃত্যু ঘটে। এতে স্ত্রী ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়েন যে, এতদিন পর স্বামীর ফিরে এসে যদি শুনতে পায়, তার শিশু পুত্রটির মৃত্যু ঘটেছে, তাহলে তো সে খুব দুঃখ ও শোকাহত হয়ে পড়বেন। হৃদয়ে বেদনার ঝড় যয়ে যাবে যে, হায় যদি শিশু পুত্রটি বেঁচে থাকতে আমি উপস্থিত হতাম এবং তাকে একটু আদর স্নেহ করতে পারতাম!
স্ত্রী তখন স্বীয় শিশু পুত্রের লাশটি গোসল দিয়ে কাপড়ে ঢেকে খাটে রেখে দিল। বিষয়টি কাউকে অবহিত করল না। অবশেষে স্বামী বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কী পুত্র সন্তান প্রসব করেছ নাকি কন্যা সন্তান? স্ত্রী উত্তরে বলল, আল্লাহ আমাকে একটি পুত্র সন্তান দান করেছেন। স্বামী জিজ্ঞাসা করল, আমার পুত্র সন্তানটি কোথায়? স্ত্রী বলল, শিশুটি আরাম করছে। স্ত্রীর কথায় স্বামী ভাবল শিশুটি ঘুমিয়ে আছে। সুতরাং স্বামী পনাহার শেষে ঘুমিয়ে পড়ল। এভাবে রাত শেষ হয়ে গেল। (স্বামীর সফরে থাকার কারণে) দীর্ঘদিন পর স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মেলামেশা হলো। সফরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করল। কিন্তু চিন্তা করুন! একজন নারী; এমন ঘটনায় একজন মায়ের হৃদয়ের অবস্থা কী হতে পারে? কত প্রবল ঝড় বয়ে যাচ্ছে সদ্য মৃত্যু ঘটা এক শিশুর লাশ খাটে রাখা মায়ের হৃদয়ে?
কিন্তু একমাত্র স্বামীর সুখের কথা ভেবে, দীর্ঘদিন পর বাড়িতে ফেরা স্বামীর মনের কথা চিন্তা করে এমন একটি বিষয়কে নিজের হৃদয়ে পাথর চাপা দিয়ে গোপন করে রেখেছে। তার ভাবনায় একটি বিষয়ই প্রাধান্য, আমার স্বামীর অন্তর যেন বিষণ্ণতা ছেয়ে না যায়। শোকে যেন তিনি পাথর বনে না যান।
শুধু এ চিন্তা করেই শিশু সন্তানের লাশ খাটে রেখেও এক স্ত্রী তার স্বামীকে বিভিন্নভাবে সঙ্গ দিয়েছে। এভাবেই সকাল হয়ে গেল। সকালবেলা স্ত্রী স্বামীকে বলল, আমাকে একটি বিষয় বলুন তো। স্বামী বলল, কী কথা? স্ত্রী বলল, কেউ যদি কারও নিকট কোনো বস্তু আমানত রাখে, আর কিছুদিন পর তা ফেরত চায়, তাহলে কী তা সানন্দে তাকে ফেরত দেওয়া উচিত নাকি সে জন্য দুঃখিত ও শোকাহত হওয়া বাঞ্ছনীয়? স্ত্রী এভাবে স্বামীকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করার পর বললেন, আল্লাহ তাআলা আপনাকে একটি পুত্রসন্তান দান করেছিলেন, কিন্তু আপনি ফিরে আসার কিছুক্ষণ পূর্বেই তা তিনি ফিরিয়ে নিয়েছেন। সুতরাং এখন আপনি তাকে সানন্দে আল্লাহ তাআলার কাছে সোপর্দ করুন।
আরও পড়ুন: বিয়েতে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দেনমোহর কত?
আল্লাহু আকবার! এই নারী সাহাবী এভাবেই স্বীয় স্বামীর সাথে উত্তম আচরণ পালন করলেন। সকালে উক্ত সাহাবী রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হয়ে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমার গৃহে এরূপ ঘটনা ঘটেছে। কেবল আমার মনোরঞ্জনের জন্যই আমার স্ত্রী এরূপ ধৈর্য ও দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য দুআ করলেন। ফলে তাদের উপগত হওয়ার সেই রাতে আল্লাহ তাআলা বরকত দান করলেন। তাদের মিলনে স্ত্রী পুনরায় সন্তান সম্ভবা হলেন এবং আল্লাহ তাআলা তাকে একটি পুত্র সন্তান দান করলেন। যিনি হাফেজে কুরআন ও হাফেজে হাদিস হয়েছিলেন।
আজ আমাদের সমাজের নারীদের কথা ভাবা যায়! পান থেকে চুন খসার আগেই স্বামীর সাথে ঝগড়া শুরু করে দেয়। মহান আল্লাহ আমাদের সমাজের নারীদেরও এভাবে প্রস্তুত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলাবার্তা/জেডএইচ