
ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যদি ইচ্ছা করেন, তাহলে তিনি যে কোনো সময় দেশে ফিরতে পারেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বাধা নেই বলেও তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দুপুর ১২টার দিকে গাজীপুরের সালনা হাইওয়ে থানা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের অংশ হিসেবে তিনি এই থানা পরিদর্শনে যান এবং পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্ন ছিল, তারেক রহমান দেশে ফিরতে চাইলে কী বাধা আছে কিনা? এর জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। তার দেশে ফেরার অধিকার আছে। সরকার তাকে দেশে ফেরার ক্ষেত্রে কোনো বাধা দিচ্ছে না। তিনি চাইলে যে কোনো সময় দেশে ফিরে আসতে পারেন।”
তারেক রহমান বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন এবং ২০০৮ সাল থেকে স্বেচ্ছা-নির্বাসনে রয়েছেন। রাজনৈতিক কারণে বিদেশে থাকার সময় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা ও আদালতের রায় থাকলেও, বর্তমানে তাকে দেশে ফেরাতে সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে বুঝা যাচ্ছে। বরং সরকার পক্ষ থেকে এখন তাকে ফিরতে উৎসাহিত করার মতো বক্তব্য আসছে, যা রাজনীতির চলমান প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করছে।
এদিকে, একই অনুষ্ঠানে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়েও মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, “সম্প্রতি আমরা দেখতে পাচ্ছি ভারত থেকে কথিত বাংলাদেশি নাগরিকদের সীমান্ত দিয়ে পুশ ইন করা হচ্ছে। এই ধরনের কার্যক্রম কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যাদেরকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, তারা কোনো প্রপার চ্যানেল অনুসরণ না করে, অমানবিকভাবে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে—যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল।”
তিনি আরও জানান, “ভারতের হাইকমিশনারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। আমরা বলেছি, যদি তারা সত্যিই বাংলাদেশি নাগরিক হন, তাহলে সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফেরত পাঠানো উচিত। এভাবে জঙ্গলের মধ্যে ফেলে দেওয়া অনৈতিক ও অমানবিক।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এসময় আরও তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রথমত, তিনি সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন যেন তার বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ প্রচার না করা হয়। তিনি বলেন, “আমি যা বলছি, তা পুরোপুরি তুলে ধরবেন। খণ্ডিত করে প্রচার করা হলে, পার্শ্ববর্তী দেশগুলো তাতে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে এবং ভুল ব্যাখ্যার আশঙ্কা থাকে।”
দ্বিতীয়ত, তিনি পরিবেশ সুরক্ষার লক্ষ্যে পলিথিন ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। এবং তৃতীয়ত, তিনি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগিদ দিয়ে বলেন, “করোনাভাইরাস ও অন্যান্য সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।”
এ সময় তিনি উপস্থিত জনগণের মাঝে মাস্ক বিতরণ করেন এবং স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে হাইওয়ে থানার পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুধু আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জায়গা নয়, জনসচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যের ঠিক দু’দিন আগে, গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গুলশানে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে বলেন, “তারেক রহমান নিশ্চয়ই দেশে ফিরবেন। অবশ্যই ফিরবেন। শিগগিরই ফিরবেন।” তবে তিনি কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা জানাননি।
এই প্রেক্ষাপটে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠকের খবর। লন্ডনে শুক্রবার (১৩ জুন) স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে বলে বিএনপি সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বৈঠক বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সমীকরণে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরা এবং রাজনৈতিক গতিপথ নতুন মোড় নিতে পারে কি না—এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে তুঙ্গে। বিশেষ করে সরকারের পক্ষ থেকে তার ফিরে আসার ক্ষেত্রে কোনো বাধা না থাকার স্পষ্ট ঘোষণা, এবং বিএনপির পক্ষ থেকে তার ফিরে আসার ইঙ্গিত—এই দুই দিকের মিলনবিন্দুতে একটি বড় রাজনৈতিক পরিণতির পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে।
পরিস্থিতির পরবর্তী আপডেট জানতে সব পক্ষই অপেক্ষায় রয়েছে। তারেক রহমান আদৌ দেশে ফিরবেন কি না, বা ফিরলেও সেটি কবে—তা এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ