
ছবি: সংগৃহীত
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, প্রশাসনিক প্রস্তুতি ও ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়ায় পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরুর আগের সপ্তাহেও জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব। শুক্রবার লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।
এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে তাৎপর্যপূর্ণ এবং বহুল প্রতীক্ষিত এক আশ্বাস হিসেবে দেখা হচ্ছে। বৈঠকের পর অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান একটি যৌথ বিবৃতি পাঠ করেন, যাতে দুই পক্ষের আলোচনার মূল বিষয় ও সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরা হয়।
বিবৃতিতে জানানো হয়, তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে প্রস্তাব দেন আগামী বছরের রমজান শুরুর আগেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য, যাতে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার হয় এবং একটি প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠনের পথ সুগম হয়। তিনি বলেন, এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন হলে তা জনমত, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার জন্য সহায়ক হবে।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও মনে করেন, রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। যদিও তিনি গুরুতর অসুস্থ এবং বর্তমানে রাজনীতিতে সক্রিয় নন, তবু জাতীয় সংকটময় সময়ে তাঁর মতামত দলের সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, তিনি আগেই ঘোষণা দিয়েছেন যে ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তবে বাস্তবতার আলোকে এই সময়সীমা আরও এগিয়ে আনা সম্ভব, যদি নিম্নোক্ত শর্তগুলো পূরণ হয়: নির্বাচন কমিশনের কাঠামোগত সংস্কার সম্পন্ন, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত, ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও কারিগরি প্রস্তুতি শেষ, সব রাজনৈতিক দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অংশগ্রহণে কোনো বাধা না থাকা।
তিনি বলেন, "আমরা চাই, এই নির্বাচন শুধু একটি ভোট গ্রহণই না, বরং তা হোক একটি জাতীয় পুনর্জাগরণের সূচনা। সেজন্য আমাদের প্রস্তুতি এবং ন্যায়বিচারের পথে অগ্রগতি—দুটিই অত্যন্ত জরুরি।"
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, ড. ইউনূসের এই অবস্থানকে তারেক রহমান স্বাগত জানিয়েছেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দলের পক্ষ থেকে আস্থাও প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমরা ইতিবাচকভাবে নির্বাচনমুখী হচ্ছি। আমরা চাই একটি গ্রহণযোগ্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠন হোক।”
এই যৌথ সংবাদ সম্মেলনকে অনেকেই একটি রাজনৈতিক মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করছেন। কারণ এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো অন্তর্বর্তী সরকার এবং অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির মধ্যে নির্বাচনী সময়সূচি নিয়ে সুস্পষ্ট আলোচনা ও বোঝাপড়ার ইঙ্গিত মিলল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এতদিন ধরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অনিশ্চয়তা, অস্থিরতা ও পারস্পরিক অবিশ্বাস থাকলেও এই বৈঠক ও যৌথ বিবৃতি নির্বাচনের নতুন পথনকশা তৈরি করেছে। বিশেষ করে, একটি সময়সীমা নির্ধারণ এবং নির্বাচন-সংক্রান্ত সংস্কার সম্পন্ন করার বিষয়টি স্পষ্টভাবে আলোচনায় এসেছে।
এই বৈঠক ও ঘোষণার পরপরই লন্ডনে বাংলাদেশ মিশনের একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই সংবাদ সম্মেলন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। জাতিসংঘের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক দপ্তরও এই বিবৃতি সংগ্রহ করে তা তাদের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
উভয় পক্ষ জানিয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আরেক দফা আলোচনা হবে, যেখানে নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়, তফসিল, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ও পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিবৃতির শেষে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা আশাবাদী। আমাদের পথ সহজ নয়, কিন্তু জাতির কল্যাণে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ