
ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ইসরায়েলের হামলার জবাবে পাল্টা সামরিক অভিযানে নেমেছে ইরান। টাইমস অব ইসরায়েলের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, গত কয়েক ঘণ্টায় ইরান ইসরায়েলের উদ্দেশে শতাধিক ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলছে, এসব ড্রোনকে ভূপাতিত করতে তারা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা চালু করেছে।
আইডিএফ মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডিফ্রিন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ইরান ১০০টিরও বেশি ড্রোন একযোগে ইসরায়েলের দিকে ছুঁড়েছে। এসব ড্রোনের অধিকাংশই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এবং দীর্ঘ পাল্লার। লক্ষ্যবস্তু ছিল সামরিক ঘাঁটি, বিমানবন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি কৌশলগত স্থান। ড্রোনগুলো ইসরায়েলের আকাশসীমায় প্রবেশের আগেই আইডিএফ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করে এবং কিছু ড্রোন ইতিমধ্যে ভূপাতিত করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
তবে এই পাল্টা হামলার পেছনে রয়েছে ইসরায়েলের আগ্রাসী ও বিস্ময়কর অভিযান। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই ইসরায়েল ইরানের অভ্যন্তরে নজিরবিহীন হামলা চালায়। টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী অন্তত পাঁচটি পৃথক ধাপে ইরানের বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে। ওই হামলায় ৮টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে শতাধিক বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ইরানে যে স্থাপনাগুলিতে হামলা চালানো হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র, আইআরজিসির সামরিক ঘাঁটি, অস্ত্রভাণ্ডার এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, এই হামলায় ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)-এর প্রধান হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। একই সঙ্গে নিহত হয়েছেন দুইজন পরমাণু বিজ্ঞানী, যাদের নাম এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই খবরে তীব্র নজর রাখছে।
ইসরায়েলি হামলার পরপরই তেহরানের আকাশে একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে আতঙ্কিত জনতা বোমাশেল্টার ও নিরাপদ স্থানে ছুটছে। সরকারি টেলিভিশন ও বেতার বারবার জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে।
এই ঘটনার জেরে ইসরায়েল তার আকাশসীমা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ঘোষণা করেছে। দেশটির বেন-গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ সব বেসামরিক ও সামরিক বিমান চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। তেল আবিবের আশপাশের শহরগুলোতে টেলিভিশনে জারি করা হয়েছে রকেট ও ড্রোন হামলার সতর্কতা সংকেত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পাল্টাপাল্টি হামলা কেবল মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং গোটা বিশ্বের জন্য এক ভয়াবহ সংকেত। ইরান ও ইসরায়েল – উভয় দেশের যুদ্ধক্ষমতা এবং মিত্রশক্তির অবস্থান বিবেচনায় এই সংঘর্ষ যেকোনো সময় পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ বা আঞ্চলিক যুদ্ধ রূপ নিতে পারে।
ইতিমধ্যে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং সব পক্ষকে সংযম অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছে। তবে বাস্তবতার মাটিতে পরিস্থিতি ক্রমেই আরও উত্তপ্ত হচ্ছে।
ইরান সরকার বলেছে, তাদের এই ড্রোন হামলা ‘প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া’ এবং এটি ইসরায়েলের আগ্রাসনের জবাব মাত্র। তবে তেহরানের ভাষ্য অনুসারে, এখনো মূল পাল্টা-প্রত্যাঘাত বাকি। তাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে, যতক্ষণ না ইসরায়েল তাদের আগ্রাসন থামাচ্ছে, ততক্ষণ পাল্টা আঘাত চলবে।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন রাজধানীতে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ ও কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। আঞ্চলিক উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় তেল ও গ্যাসের বাজারেও প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বেড়ে গেছে কয়েক ডলার।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, ইসরায়েলের কয়েকটি স্থানে বিস্ফোরণের শব্দ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে সরকারিভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও হতাহতের সংখ্যা জানানো হয়নি। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলো বলছে, পরিস্থিতি যে কোনো সময় আরও ভয়াবহ মোড় নিতে পারে।
সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল, বিবিসি, আল জাজিরা, রয়টার্স
বাংলাবার্তা/এমএইচ