
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আলোচিত ও প্রভাবশালী নেত্রী নীলা ইস্রাফিল আজ সোমবার ঘোষণা করেছেন, তিনি এনসিপির সঙ্গে সমস্ত রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সম্পর্ক ছিন্ন করছেন। এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তিনি এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দলের প্রতি তার অসন্তোষ ও ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন। নীলা অভিযোগ করেছেন, এনসিপিতে অপরাধীদের বিচার হয় না, দলটি কোনো ন্যায়বিচার প্রদানে অক্ষম এবং একজন নারীকে হেনস্তার পরও অপরাধীদের পক্ষ নেওয়া হয়।
নিজের ফেসবুক পেজে লিখিত বক্তব্যে নীলা ইস্রাফিল বলেন, ‘আমি নৈতিকতার পথে হাঁটছি, দুর্বৃত্ত রাজনীতি নয়।’ তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘যেখানে একজন নারীর প্রতি অবিচার হয়, তাকে হেনস্তা করা হয়, অথচ সেই অপরাধের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না, সেখানে আমি এক মুহূর্তও থাকতে পারি না।’
নীলা আরো জানান, এনসিপি একটি রাজনৈতিক দল হলেও সেখানে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এমনকি দলের কিছু সদস্য এমন অভিযোগে জড়িত, যাদের বিরুদ্ধে সমাজে সামাজিক অবমাননা ও নিপীড়নের চেষ্টা চালানো হয়েছে, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো কড়া ব্যবস্থা না নিয়ে দলীয় ছত্রছায়ায় তাদের সমর্থন ও সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি একজন নারীকে অপমান করেছে, নিপীড়িত করেছে ও সামাজিকভাবে ধ্বংসের চেষ্টা চালিয়েছে, সে আজ দলের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই বুক ফুলিয়ে বেড়াচ্ছে। যখন এই ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে দলীয় কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, তখন ওই দল আর কোনো মতাদর্শ বা ন্যায়বিচারের প্রতিনিধিত্ব করে না।’
নীলা ইস্রাফিলের এই সিদ্ধান্ত এনসিপির অভ্যন্তরীণ সংকট ও অশান্তির ইঙ্গিত বহন করছে। তার ভাষায়, ‘আমি আজ থেকে, এখন থেকেই জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করছি। দলটি আমি নিজেই ছেড়ে দিলাম।’ তিনি জানান, এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে তার ব্যক্তিগত নৈতিকতা, আদর্শ ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে।
নীলা বলেন, ‘আমি ন্যায়ের পক্ষে আছি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো। আপসহীন প্রতিবাদ আমার অস্ত্র। সত্য ও মর্যাদার পথে আমি একা হলেও পিছপা হব না।’ তার এই কঠোর অবস্থান থেকে বুঝা যায়, তিনি কোনোভাবেই দলের বর্তমান অবস্থান ও কার্যক্রমকে সমর্থন করছেন না এবং নিজের রাজনৈতিক জীবনে অন্য পথে এগোতে চাচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নীলা ইস্রাফিলের পদক্ষেপ এনসিপির জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে, কারণ তিনি দলের মধ্যে একজন গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী নেত্রী হিসেবে পরিচিত। তার এই অসন্তোষ ও তীব্র সমালোচনা দলের ভেতরে গঠনমূলক পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তাকে সামনে এনেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে এমন ব্যক্তিগত ও নৈতিক দ্বন্দ্ব রাজনৈতিক দৃশ্যপটে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে যখন একটি দল নির্বাচনের আগে এই ধরনের সংকটে জর্জরিত হয়, তখন তা দলের ভাবমূর্তি ও জনসাধারণের আস্থা ক্ষুণ্ন করে।
নীলা ইস্রাফিলের ঘোষণার প্রেক্ষিতে এনসিপির পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো বলছে, এই ঘটনা দলের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেবে এবং ভবিষ্যতে রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নীলার মতো প্রভাবশালী নেতার পদত্যাগ দলীয় শৃঙ্খলার জন্য একটি বড় সংকেত এবং অন্যান্য নেতাদের জন্যও সতর্কবার্তা। এটা নির্দেশ করে যে দলটির অভ্যন্তরীণ সংস্কৃতি ও মূল্যবোধে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন।
নীলা ইস্রাফিলের এই সিদ্ধান্ত এবং তার কঠোর বক্তব্য দেশের রাজনীতিতে নারীর অবস্থান, রাজনৈতিক দলগুলোর নৈতিক দায়বদ্ধতা ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে তার এই ধারা ভবিষ্যতে নারীর ক্ষমতায়ন ও রাজনৈতিক স্বচ্ছতার ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
সংক্ষেপে, নীলা ইস্রাফিল জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে নতুন রাজনৈতিক অধ্যায় শুরু করেছেন। তার এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক ও আলোচনা সৃষ্টি করেছে, যা এনসিপির ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ