
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান যুগে যোগাযোগের অন্যতম নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হয়ে উঠেছে হোয়াটসঅ্যাপ। ব্যক্তিগত বার্তা আদান-প্রদান থেকে শুরু করে অফিসিয়াল তথ্য পাঠানো, মিটিং বা অডিও-ভিডিও কলে অংশগ্রহণ—সব ক্ষেত্রেই এটি ব্যবহারকারীদের কাছে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু প্রযুক্তি যতই এগোক, বাস্তব জীবনের চাহিদাও ততই বহুমাত্রিক হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় একটি হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট দিয়ে সব কাজ সুষ্ঠুভাবে সামলানো সম্ভব হয় না। বিশেষ করে যখন কেউ একইসঙ্গে পেশাগত ও ব্যক্তিগত দুটি পরিসরে সক্রিয় থাকেন, তখন আলাদা হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট রাখার প্রয়োজন হয়।
সাধারণত হোয়াটসঅ্যাপ একটি মোবাইল নম্বরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। ফলে একাধিক অ্যাকাউন্ট চালানোর জন্য আলাদা মোবাইল ফোন ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ত এতদিন। কিন্তু স্মার্টফোন নির্মাতাদের কৌশলী উদ্ভাবন ও হোয়াটসঅ্যাপের সাম্প্রতিক ফিচার আপডেটের ফলে এখন একটিমাত্র ফোনেই চালানো সম্ভব দুটি হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট।
বিশেষ করে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চলা ফোনগুলোতে খুব সহজেই একই অ্যাপে আলাদা দুটি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা যাচ্ছে। এটি একদিকে যেমন সময় ও অর্থ সাশ্রয় করে, অন্যদিকে ব্যবহারকারীকে দেয় আরও সুনির্দিষ্ট ও সংগঠিত যোগাযোগের সুবিধা।
কীভাবে চালাবেন দুটি অ্যাকাউন্ট?
১. প্রথম ধাপ:
আপনার ফোনে থাকা হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপটি সর্বশেষ সংস্করণে আপডেট করে নিন। গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে “WhatsApp” লিখে সার্চ দিয়ে আপডেট বোতামে চাপ দিলেই হবে (যদি আপডেট পাওয়া যায়)।
২. দ্বিতীয় ধাপ:
হোয়াটসঅ্যাপ খুলে নিন। এবার উপরের দিকে প্রোফাইল ছবির পাশে থাকা তিনটি বিন্দুর মতো আইকন (ড্রপ ডাউন মেনু) ক্লিক করুন।
৩. তৃতীয় ধাপ:
মেনু থেকে “Settings”-এ প্রবেশ করুন। স্ক্রল করলে নিচের দিকে একটি “Add Account” নামে অপশন দেখতে পাবেন।
৪. চতুর্থ ধাপ:
“Add Account”-এ ক্লিক করলে নতুন একটি নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার অপশন আসবে। আপনার ব্যক্তিগত বা অফিসিয়াল যে নম্বরটি দিয়ে দ্বিতীয় অ্যাকাউন্ট খুলতে চান, সেটি দিন এবং ওটিপি যাচাইয়ের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন।
৫. পঞ্চম ধাপ:
সবকিছু ঠিকঠাকভাবে শেষ হলে আপনার হোয়াটসঅ্যাপে একসঙ্গে দুটি অ্যাকাউন্ট চালু থাকবে। আপনি চাইলে অ্যাপে থেকেই দ্রুত অ্যাকাউন্ট স্যুইচ করতে পারবেন, একটির মেসেজ বা কল থেকে সরাসরি অন্যটিতে চলে যেতে পারবেন।
সুবিধাগুলো কী কী?
এক ফোনেই দুই পরিবেশ:
এখন আর অফিস ও ব্যক্তিগত যোগাযোগ আলাদা রাখতে দ্বিতীয় ফোনের দরকার নেই। একটি ফোনেই ম্যানেজ করুন সব কিছু।
তথ্য গোপনীয়তা ও মনোযোগ বৃদ্ধি:
আপনার কাজের গ্রুপের মেসেজ আর ব্যক্তিগত বন্ধুদের বার্তা গুলিয়ে যাবে না। দুটিকে পৃথক রেখে আরও সুশৃঙ্খলভাবে তথ্য আদান-প্রদান করা যাবে।
সাশ্রয়ী পদ্ধতি:
দ্বিতীয় ফোনের খরচ নেই, বাড়তি ডেটা প্যাকেজের প্রয়োজন নেই—একসঙ্গে সবকিছু এক ডিভাইসেই।
সতর্কতাও জরুরি
এই ফিচারটি ব্যবহার করতে গেলে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে, আপনার ফোনের সফটওয়্যার ও অ্যাপস আপডেটেড রয়েছে। পাশাপাশি, প্রতিটি অ্যাকাউন্টের আলাদা ব্যাকআপ নেওয়ার ব্যবস্থা রাখা ভালো। কারণ, দুটি অ্যাকাউন্ট একই সময়ে চালালেও তাদের ডেটা বা মেসেজ আলাদা থাকে।
কিছু ফোনে ভিন্ন পদ্ধতি
যদিও হোয়াটসঅ্যাপ নিজেই এখন দুটি অ্যাকাউন্ট চালানোর অপশন যুক্ত করেছে, অনেক ফোনে ডুয়াল অ্যাপ বা “App Clone” নামের ফিচার ব্যবহার করে আলাদা আলাদা হোয়াটসঅ্যাপ ইনস্টল করেও দুটি নম্বর চালানো যেত। তবে নতুন ফিচারে সরাসরি একটি অ্যাপের মাধ্যমেই অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণ করা আরও সহজ হয়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডিজিটাল যুগে সময় ও প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার করার এ এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত। এখন আপনি এক ফোনে একসঙ্গে অফিস ও পরিবারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে পারবেন, বাড়তি ঝামেলা ছাড়াই।
বাংলাবার্তা/এমএইচ