শুক্রবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, অগ্রাহায়ণ ২৩ ১৪৩০

বাংলা বার্তা || Bangla Barta

অপরাজেয় জয়া!

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:০০, ১৬ নভেম্বর ২০২৩

অপরাজেয় জয়া!

সংগৃহীত ছবি

সোশ্যাল হ্যান্ডেল বা স্থিরচিত্রে জয়াকে যারা দেখেন, তারা মোটামুটি একটা অনুমান করে ফেলেছেন; কেন ‘লাগামহীন’ শব্দটা এলো জয়ার সঙ্গে! আবার যারা তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, তারা ঠিকই অপেক্ষা করছেন শব্দটির হেতু খুঁজতে। কারণ, ব্যক্তিগত পর্যায়ে অভিনেত্রী যথেষ্ট প্রচারবিমুখ। যার বাসার দেয়ালে নায়িকাদের অন্দরমহলের মতো নিজের কোনও বড়সড় ছবি খুঁজে পাওয়া যায় না। কিংবা ভুরি ভুরি ক্রেস্টও সাজানো থাকে না, ড্রয়িংরুমে। এমনকি তাকে নিয়ে অতিপ্রশংসা করে প্রকাশিত খবরও শেয়ার হয় না সোশ্যাল হ্যান্ডেলে। বরাবরই বলেন, ‘কি দারুণ লেখাটা। কিন্তু নিজেই সেটি শেয়ার দিতে আমি অস্বস্তি বোধ করি’।

এভাবেই চলছে গত আড়াই দশকের সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার।



সেই মানুষটির নামের সঙ্গে ‘লাগামহীন’ শব্দটা কেন জুড়ে গেলো! কারণ আছে বৈকি। এরমধ্যে খবর পেয়েছেন নিশ্চয়ই, দেশ-বিদেশে নানান স্বীকৃতি ছাপিয়ে ৫ম বারের মতো তিনি হাতে তুলেছেন নিজ দেশের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এবার পেলেন মাহমুদ দিদারের ‘বিউটি সার্কাস’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য। ছবিটি যারা দেখেছেন, তারা নিশ্চিত তৃপ্তি পেয়েছেন, জয়ার এমন প্রাপ্তিতে। তৃপ্ত হয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রীও। কারণ ছবিটি আগেই তিনি দেখেছিলেন। এবং ট্রফি হাতে তুলে দিতে দিতে জয়াকে বলেছিলেন, ‘এই পুরস্কারটি তোমার হাতে দিতে পেরে আমার সত্যিই ভালো লাগছে।’


কারণ, ছবিতে জয়া আহসান তার বাবা হত্যার প্রতিশোধের অদম্য লড়াই চালিয়েছেন সার্কাসের বিউটি চরিত্রে। পুরস্কারটি জয়া উৎসর্গ করেছেন, যাত্রাশিল্পীদের প্রতিটি মানুষের প্রতি। যারা এই জীবনটাকে এখনও টিকিয়ে রেখেছেন শত প্রতিবন্ধকতা উপড়ে।


জাতীয় জয় কিংবা আবেগের গল্প; গত দুদিনে অনেকেরই জানা হয়েছে জয়ার কণ্ঠে। এবার আশা যাক ‘লাগামহীন’ শব্দের আরেকটু ভেতরে। কাকতাল হলেও সত্যি, ১৪ নভেম্বর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মঞ্চ থেকে নেমেই দারুণ একটা খবর এলো জয়ার মুঠোফোনে। ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠিতব্য দেশটির প্রধানতম আন্তর্জাতিক সিনেমা উৎসব ‘ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল অব ইন্ডিয়া’ (আই এফ এফ আই)-এর এবারের আয়োজনে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হতে যাচ্ছে জয়া অভিনীত প্রথম বলিউড সিনেমা ‘কড়ক সিং’। যাতে জয়া আহসানের অভিনয় লড়াইটা করতে হলো পঙ্কজ ত্রিপাঠীর মতো বলিউড অভিনেতার সঙ্গে! ছবিটি পরিচালনা করেছেন অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী। 



‘গালা প্রিমিয়ারস’ নামে নতুন একটি বিভাগ চালু করেছে উৎসব কর্তৃপক্ষ। সেই বিভাগেই দেখানো হবে জয়ার প্রথম হিন্দি ছবি ‘কড়ক সিং’। এছাড়া একই বিভাগে প্রদর্শিত হবে সালমান খান প্রযোজিত ‘ফারে’, বিজয় সেতুপতি অভিনীত ‘গান্ধী টকস’সহ বিভিন্ন ভাষার বেশ কিছু আলোচিত ছবি।

উৎসবের ৫৪তম আসরটি চলবে ২০ থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত। দুই বাংলার দেবী নিশ্চিত করেছেন, শুধু ২২ তারিখ নয়, পুরো উৎসবজুড়েই সরাসরি হাজির থাকবেন। না থেকে উপায়ও বা কি! না, শুধু এটুকুর জন্য ‘লাগামহীন’ বলাটা অবিচারই হবে। 


বলিউডের অভিষেক সিনেমার গোয়া প্রিমিয়ার কিংবা সেখানে হাজির থাকা; এমন খবরেও জয়া আহসানের সঙ্গে ‘লাগামহীন’ শব্দটি লাগানোর হেতু খুঁজে পাচ্ছেন না তো! তাহলে শুনুন, একজন ঢাকাই অভিনেত্রী কতোটা প্রভাবশালী (লাগামহীনও বলা যেতে পারে) হলে পরে ভারতের একটি ডাকসাইটে আন্তর্জাতিক উৎসবে একসঙ্গে হাজির হন পাঁচ পাঁচটি সিনেমা নিয়ে। তাও আবার স্বদেশী ঢালিউড সিনেমা একটিও নয়। সবই টলিউড, বলিউড আর ইরানি! 


এরমধ্যে বলিউডের ‘কড়ক সিং’-এর গল্প তো পড়লেনই। এবারের উৎসবে নানান বিভাগে প্রতিযোগিতা করছে জয়া অভিনীত আরও চারটি ছবি! এরমধ্যে রয়েছে টলিউডের কৌশিক গাঙ্গুলির ‘অর্ধাঙ্গিনী’, সুমন মুখোপাধ্যায়ের ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ আর সায়ন্তন মুখোপাধ্যায়ের ‘ঝরা পালক’। আরও থাকছে ইরানি ছবি মুর্তজা অতাশ জমজম-এর ‘ফেরেশতে’।


পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য কোনও আন্তর্জাতিক উৎসবে কোনও নায়িকা বা মূল অভিনেত্রীর একসঙ্গে পাঁচটি ছবি অংশ নিতে পেরেছে কি না, সেটি এখন বড় প্রশ্ন বা অনুসন্ধানের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এসব কনফিউশন ছাপিয়ে বাংলাদেশের জয়া যেন নতুন মশাল হাতে দাঁড়িয়ে আছেন ভারতবর্ষের বুকে। যে মশালটি পৃথিবীর দৃষ্টিসীমায় আসবে ২০ নভেম্বর থেকে, জ্বলবে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত।

ছবিগুলো কোনটি কোন বিভাগে, এখনও সেটি নিয়ে বিশ্লেষণে যেতে পারেননি জয়া। কারণ, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘরে তুলেই মা রেহানা মাসউদের জন্মদিনের (১৫ নভেম্বর) কেক নিয়ে ঢাকায় ব্যস্ত অভিনেত্রী। জানান, নিজ শহর ছেড়ে ভারতের গোয়ায় নামবেন ২০ তারিখের মধ্যে।


একদিকে দেশ থেকে পঞ্চম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, অন্যদিকে গোয়া উৎসবে উঠছে তারই তিন ভাষার পাঁচটি ছবি। কেমন অনুভূতি? জবাবে সলজ্জ হাসি। আবেগে গদগদ বা ‘লাগামহীন’ না হয়ে কণ্ঠে দু’চরটি শব্দ অস্ফুটে। বুধবার (১৫ নভেম্বর) রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘জাতীয় পুরস্কার। এটা তো একজন শিল্পীর জন্য আপাতত সর্বোচ্চ পাওয়া। তবে যে কাজটির জন্য পেলাম, সেটা সত্যিই তৃপ্তির বিষয়। কারণ, এই কাজটি করেছি একেবারে আবেগ আর দায়বদ্ধতা থেকে। প্রাপ্তির আশা একটুও ছিলো না। অনেক কষ্ট করেছি। অনেক আঘাত পেয়েছি। অসুস্থ হয়েছি চরিত্রটিকে ধারণ করার জন্য। ফের উঠে দাঁড়িয়েছি, সার্কাসের রিং-এ ঝুলেছি। একটি দৃশ্যও ডামি করিনি। সেটা পেরিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে এমন স্বীকৃতি সত্যিই স্বস্তির।’


আপনাকে অভিনন্দন। গোয়া উৎসবে একই অভিনেত্রীর পাঁচ ছবি! ইতিহাসে বিরল ঘটনা। কী বলবেন? ‘‘আমি আসলে ‘কড়ক সিং’-এর প্রিমিয়ারের কথা জানতাম। জাতীয় পুরস্কারটি হাতে নিয়ে নামার পর একদিনেই একে একে জানতে পারলাম উৎসবের বিভিন্ন বিভাগে আমারই আরও চারটি ছবি স্থান পেয়েছে। আমি আসলে জানি না, সংখ্যার বিচারে পৃথিবীতে এমন বিষয় কয়টি আছে কিংবা আদৌ আছে কি না। এসব নিয়ে আমি ভাবিওনি। শুধু প্রশ্নটা শুনে ভাবনাটা এলো, উত্তর জানা নেই। যাইহোক, সেটা বড় বিষয় নয়। বিষয়টি হচ্ছে, ভালো লাগা। একই উৎসবে এতগুলো ছবি যাচ্ছে। আমিও থাকবো সেখানে। নিশ্চয়ই সময়টা উপভোগ করবো। এটুকুই আপাতত।’       

এরপরেও যদিও জয়াভক্তদের ‘লাগামহীন’ শব্দটি নিয়ে আপত্তি থাকে, তবে শেষ যুক্তি হিসেবে দাঁড় করানো যাক টলিউডের বাণিজ্যিক বিশ্লেষণ।


এটা তো সত্যি, উৎসব আর অ্যাওয়ার্ড দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি টেকানো যায় না। ইন্ডাস্ট্রি টেকে বাণিজ্যের জোরে। সেটি না টেকাতে পারলে এসব প্রাপ্তিও অর্থহীন। মিরাকল হলেও সত্যি, জয়া এমনই ‘লাগামহীন’ যিনি ঢালিউড আর টলিউডে শিল্প ও বাণিজ্যের কাঁধে হাত ঝুলিয়ে হেঁটে চলেছেন কি দারুণ! বিশেষ করে শেষ ক’বছরে টলিউড সিনেমার বাণিজ্য খুব একটা সুখকর নয়। বলা হচ্ছে টলিউডের ডুবন্ত নৌকায় নাকি পানি সেচের বিরামহীন কাজটি করছেন জয়া আহসান! বক্সঅফিসের মাস্টার মশাইরাও তাই বলেন। চলতি বছর হাতে গোনা কয়েকটি ছবি মোটে সুপারহিট হতে পেরেছে টলিউডে। আর সেই তালিকায় প্রথম নামটি জয়া আহসানের ‘অর্ধাঙ্গিনী’। তারও খানিক আগে ‘বিনি সুতোয়’ আর বাণিজ্যের শেষ ঝলকটা দিয়ে গেলেন এই তো সেদিন (১৯ অক্টোবর) ‘দশম অবতার’ দিয়ে।


যদিও এসব হিসাব-নিকাশে বিব্রত হন জয়া। বললেন, ‘দেখুন আমি শুধু কাজটা করে যাই। যে কাজটা করি, সেটা শতভাগ সততার সঙ্গে করার চেষ্টা করি। করার আগে সাতবার ভাবি চরিত্রটা নিয়ে। এটুকুই। এর বাইরে আমার মাথায় আর কোনও অংক খেলে না।’

 

অংক বা কৌশল বা ফিল্মি পলিটিক্স নয়; জয়া মূলত ‘লাগামহীন’ তার শ্রম, সততা, স্থিরতা আর স্বীকৃতির পথে। একশব্দে জয়াবচন, ‘থিংক পজিটিভ’। যার নামের পাশে জায়গা হলে ‘লাগামহীন’ শব্দটিও ইতিবাচক হয়ে ধরা দেয়!

Right Side Advertisement
Right Side Advertisement
Middle Advertisement
Middle Advertisement Mobile