
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে ঘটতে যাচ্ছে এক বিরল ও নজিরবিহীন ঘটনা। ঢালিউডের শীর্ষ তারকা শাকিব খান অভিনীত একটি সিনেমার তিনটি সিক্যুয়েল বা ধারাবাহিক পর্ব একই সময়ে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। এমন উদ্যোগ শাকিব খানের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে আগে কখনো দেখা যায়নি, এমনকি বৈশ্বিক চলচ্চিত্র জগতেও এই ধরনের একযোগে তিন পর্ব মুক্তির উদাহরণ নেই বললেই চলে। আর এই অভিনব পরিকল্পনার পেছনে রয়েছেন ‘বরবাদ’ সিনেমার পরিচালক মেহেদী হাসান হৃদয়।
পরিচালক হৃদয় গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, তার নতুন সিনেমাটি হবে বিশাল ক্যানভাসে নির্মিত একটি অ্যাকশন-ড্রামা ধাঁচের ছবি, যা একসঙ্গে তিনটি পর্বে মুক্তি পাবে। সাধারণত বড় বাজেটের সিনেমা হলে এক পর্ব মুক্তির পর দর্শক প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে দ্বিতীয় বা তৃতীয় পর্ব তৈরি করা হয়। কিন্তু এই ছবির ক্ষেত্রে শুরু থেকেই পরিকল্পনা করা হয়েছে পুরো তিন পর্ব একসঙ্গে শুটিং করে, একসঙ্গে মুক্তি দেওয়ার।
তিনি বলেন, “শাকিব ভাইকে নিয়ে আমরা এমন কিছু করতে যাচ্ছি যা আগে কখনো হয়নি। সিনেমাটি তিন পার্টে মুক্তি পাবে, কিন্তু আলাদা আলাদা সময়ে নয়। দর্শক একসঙ্গে তিনটি পর্বই উপভোগ করার সুযোগ পাবেন। এজন্য আমাদের প্রস্তুতিটা হবে দীর্ঘমেয়াদি ও সুপরিকল্পিত। এখন চিত্রনাট্য লেখার কাজ চলছে। গল্পের বিশালতা ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে সিনেমাটি হবে আলাদা মাত্রার।”
নির্মাতা হৃদয় আরও জানান, তিন পর্বের শুটিং একটানা সম্পন্ন করা হবে, যাতে গল্প ও চরিত্রের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ থাকে এবং ভিজ্যুয়াল মানে কোনো তারতম্য না ঘটে। এর ফলে দর্শক তিনটি সিনেমা পেলেও এগুলো একে অপরের সঙ্গে গল্পে ও আবহে নিবিড়ভাবে যুক্ত থাকবে।
তিনি বলেন, “আমরা আলাদা আলাদা করে শুটিং করতে চাই না। পুরো প্রজেক্টটাকে একটি বিশাল নির্মাণ হিসেবে দেখতে চাই। তাই একটানা শুটিং করে, একসঙ্গে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। এই ধরণের প্রচেষ্টা আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”
এই নতুন প্রকল্পের প্রতি শাকিব খানের আগ্রহের কথাও জানিয়েছেন পরিচালক। হৃদয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘বরবাদ’ সিনেমার প্রিমিয়ারে শাকিব খানই প্রথম ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে ভবিষ্যতে বড় কোনো প্রজেক্ট আসছে। এরপর গল্প ও চিত্রনাট্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর তিনি এই নতুন ছবিতে অভিনয়ের জন্য রাজি হন।
পরিচালক বলেন, “গল্পটি শোনার পর শাকিব ভাই খুব উচ্ছ্বসিত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, এরকম কনসেপ্টে কাজ করলে সেটা শুধু বাণিজ্যিক সাফল্যই নয়, বরং শিল্পের দিক থেকেও নতুন মাইলফলক হবে। শাকিব ভাই সবসময় ভিন্ন ধাঁচের কিছু করতে চান, আর এই প্রজেক্টটি তারই একটি দৃষ্টান্ত হতে যাচ্ছে।”
যদিও ছবির নাম ও নির্দিষ্ট মুক্তির তারিখ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি, তবে নির্মাতা জানিয়েছেন, সব কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চললে আসন্ন যে কোনো ঈদ উৎসবেই সিনেমাটি মুক্তি দেওয়া হতে পারে। তখন দর্শক একই সঙ্গে তিনটি ধারাবাহিক সিনেমা দেখার অনন্য সুযোগ পাবেন, যা ঢালিউডে আগে কখনো ঘটেনি।
বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে সাম্প্রতিক সময়ে গল্প, নির্মাণশৈলী ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে নতুনত্ব আনার চেষ্টা বাড়ছে। শাকিব খান ও মেহেদী হাসান হৃদয়ের এই উদ্যোগ সফল হলে তা ঢালিউডের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ