
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে মব সহিংসতার হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চার বছরে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় পাঁচ গুণে পৌঁছেছে। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে এ ধরনের ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ২৯ জন, আর ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৬ জনে। গত ১২ মাসে নিহত হয়েছেন ১৭৭ জন—যা প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১৪ জন।
ভয়াবহতা ও বিস্তার
মব সহিংসতা কেবল সন্দেহভাজন অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; এখন এর শিকার হচ্ছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও। এমএসএফ জানায়, গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ছিল ৪৭, কিন্তু আগস্ট থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে মারা যান ৯৯ জন—বছরের মোট মৃত্যুর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ।
পুলিশের ব্যাখ্যা
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন বলেন, অতীতে একটি পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ায় মবের প্রভাব বাড়ে। এখন পরিস্থিতি আগের তুলনায় নিয়ন্ত্রণে, এবং যে কোনো অপরাধের খবর পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি সাধারণ নাগরিকদের যেকোনো সমস্যায় নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ বা ৯৯৯-এ ফোন করার আহ্বান জানান।
অন্যান্য সংস্থার পর্যবেক্ষণ
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানায়, গত বছর জানুয়ারি-জুলাই সাত মাসে ৩২ জন নিহত হলেও বছরের বাকি পাঁচ মাসে মারা গেছেন ৯৬ জন, যা মোট মৃত্যুর ৭৫ শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারি-জুনে ঢাকায় ৪৫ জন, চট্টগ্রামে ১৭ জন, বরিশালে ১১ জনসহ সারাদেশে ৮৯ জন নিহত হয়েছেন।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টিভঙ্গি
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর জরিপে দেখা যায়, ৭১.৫ শতাংশ তরুণ মনে করে মব জাস্টিস আইনের প্রতি আস্থা নষ্ট করছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রবিউল ইসলাম বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকর ভূমিকা না থাকা, রাজনৈতিক প্রভাব, গোয়েন্দা তথ্যের ঘাটতি ও বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা এ প্রবণতার পেছনে বড় কারণ।
তিনি গণপিটুনিকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এবং মব সহিংসতাকে পরিকল্পিত ও সংগঠিত প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করেন।
আলোচিত সাম্প্রতিক ঘটনা
-
রংপুরের তারাগঞ্জ: ভ্যানচোর সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা।
-
মিরপুর, ঢাকা: এক পুলিশ পরিদর্শক বাজার করতে গিয়ে মবের হামলায় নগদ টাকা ও ফোন হারান।
-
উত্তরা: সাবেক সিইসি কে এম নুরুল হুদার বাসায় মব জমায়েত, যা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “যদিও এ ধরনের ঘটনার হার কিছুটা কমেছিল, সাম্প্রতিক সময়ে আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। মব সহিংসতায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ