
ছবি: সংগৃহীত
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য সুখবর। সরকারি বিভিন্ন পরিকল্পনার মাধ্যমে তাদের বেতন বৃদ্ধির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে। মধ্য ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমে চলতি বছরের জুলাই থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি কার্যকর হবে। জানা গেছে, বেতন বৃদ্ধি ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ সাত হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে, যা দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় একটি উল্লেখযোগ্য প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
মাউশির এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (ইএমআইএস) সেলের প্রোগ্রামার-৫ জহির উদ্দিন জানান, জুলাই-২০২৫ মাসের প্রথম লটে মোট তিন লাখ ৭৮ হাজার ৪৫৭ জন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করা হবে। এতে মোট ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় এক হাজার ২৯ কোটি টাকা, যা গত মাসের জুন-২০২৫ এর প্রথম লটের তুলনায় প্রায় ১৪৫ কোটি টাকা বেশি।
এই বেতন বৃদ্ধির ফলে দেশের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষক ও কর্মচারীদের আয়-ব্যয়ের ওপর ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষত, বেসরকারি শিক্ষাখাতে কর্মরত নিম্ন গ্রেডের কর্মীরা যেমন আয়া, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধি পাবেন। এদের জন্য এটি জীবিকা পরিচালনায় বড় সহায়তা হিসেবে ধরা হচ্ছে।
তদুপরি, জুনিয়র শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করা হচ্ছে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। যারা সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত এবং বর্তমানে সাড়ে ১২ হাজার টাকা বেতনে কাজ করছেন, তাদের বেতন বাড়ানো হবে এক হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত। এটি তাদের জীবনে আর্থিক স্থিতিশীলতা এনে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি হবে দুই থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে বেতন বৃদ্ধি পাঁচ হাজার টাকাও হতে পারে, যা তাদের পেশাগত মর্যাদা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি, প্রধান শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো হবে প্রায় সাত হাজার টাকা পর্যন্ত, যা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচ্চতর দায়িত্বে থাকা তাদের প্রতিকৃতিস্বরূপ।
মাউশির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দেশের শিক্ষাখাতের মানোন্নয়নে এবং শিক্ষকদের কর্মদক্ষতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া, বেতন বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষক ও কর্মচারীদের কর্মসংস্থান নিরাপত্তা ও মনোবলও বৃদ্ধি পাবে।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত শিক্ষক ও কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরেই বেতন বৃদ্ধির জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলেন। বিশেষত, বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে যেখান থেকে দামের উর্ধগতি এবং দৈনন্দিন জীবনযাপনের ব্যয় বেড়ে গেছে, সেখানে বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি তাদের জন্য অতীব জরুরি ছিল।
একজন অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদ বলেন, ‘বেতন বৃদ্ধি শিক্ষকদের পেশাগত দায়িত্ববোধ ও উদ্যম বৃদ্ধি করবে। এটি শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের এই পদক্ষেপ বেসরকারি শিক্ষাখাতকে আরো শক্তিশালী ও টেকসই করে তুলবে।’
আরও জানা গেছে, আগামী মাসগুলোতে এই বেতন বৃদ্ধি পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যেও প্রয়োগ করা হবে। মাউশি এই প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ ও কার্যকর করতে সর্বোচ্চ নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।
পরবর্তীতে বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষক-কর্মচারীদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ও কর্মপরিবেশ উন্নয়নেও কাজ করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এই ধরণের পদক্ষেপ দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও দক্ষ ও ফলপ্রসূ করে তুলবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।
সর্বশেষ, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য এই বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা সমাজের মধ্যে ব্যাপক স্বাগত ও প্রশংসা পাচ্ছে। তাদের জীবনের আর্থিক নিরাপত্তা ও সম্মান বৃদ্ধিতে এই পদক্ষেপকে একটি বড় ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ