
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আগামী ২৩ ও ২৪ জুলাই, অর্থাৎ বুধবার ও বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিতব্য সকল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সংঘটিত ভয়াবহ যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। মাইলস্টোনে ঘটেছে একটি ভয়াবহ বিমান বিধ্বংসী দুর্ঘটনা, যা শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সমাজে গভীর শোক ও স্তব্ধতার সৃষ্টি করেছে। দুর্ঘটনায় বহু শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও মানসিক অবস্থা বিবেচনায় এনে এই জরুরি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাত ৯টার দিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বংসী দুর্ঘটনার কারণে শিক্ষার্থীদের জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং এই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, "এই দুই দিনের পরীক্ষা স্থগিত থাকার সময়সূচি পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী অন্যান্য পরীক্ষার তারিখ ও সময় অপরিবর্তিত থাকবে।"
উল্লেখ্য, সোমবার (২২ জুলাই) দুপুর সোয়া ১টার দিকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ‘হায়দার আলী’ ভবনে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বংসীভাবে আছড়ে পড়ে। বিমানটি বিধ্বংসী শব্দে পড়ার পর মুহূর্তেই স্কুলের ওই ভবন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। এতে প্রচুর শিশু ও শিক্ষার্থী ধোঁয়া আর আগুনে দগ্ধ হন। স্কুলের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়া তাদের প্রিয় শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারীদের মধ্যে অনেকেই আহত হয়েছেন।
এই দুর্ঘটনা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীসহ সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে গভীর শোক ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে। দুর্ঘটনার কারণে শিক্ষার্থীদের মনোবল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়, পরীক্ষা আয়োজন করাটা অনুচিত মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পরীক্ষা স্থগিতকরণ শিক্ষাব্যবস্থায় এক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। পরীক্ষার পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও সময়সূচিতে সাময়িক পরিবর্তনের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি করুণাশীল দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ছাত্রদের মানসিক প্রস্তুতির স্বার্থে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, স্থগিতকৃত পরীক্ষাগুলোর নতুন সময়সূচি নির্ধারণের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং তা সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবিলম্বে জানানো হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য পরীক্ষা ও কার্যক্রম পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ীই চলবে এবং তা প্রভাবিত হবে না। শিক্ষার্থীদের বিষয়ক যেকোনো প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও জনসংযোগ দপ্তরের বিজ্ঞপ্তি নিয়মিত মনিটর করতে বলা হয়েছে।
পরিস্থিতি বুঝতে পারা ও একাত্মতা প্রদর্শনের জন্য শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করেছে। অনেকেই জানান, এই দুদিনের মধ্যে তারা মানসিক শিথিলতা লাভ করতে পারবেন এবং পরে পরীক্ষা দিতে আরও প্রস্তুত হবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা ও মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ ব্যবস্থা করা হবে।
এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা ও মঙ্গলার্থে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে এবং দেশব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে মানসিক সমর্থন প্রদানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ