
ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে নির্বাচনী পরিবেশকে স্বচ্ছ, নিরাপদ ও সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নতুন একটি বিস্তৃত নীতিমালা জারি করেছে। এই নীতিমালা বিশেষভাবে নির্বাচনী পরিবেশে দায়িত্ব পালনকারী সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য প্রণীত, যাতে তারা নির্বিঘ্নে এবং নিরপেক্ষভাবে সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশন করতে পারেন।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে বুধবার প্রকাশিত ‘নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নীতিমালা, ২০২৫’ শিরোনামের এই দলিলটিতে বিস্তারিত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যা শুধু ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্যই নয়, বরং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য থাকবে।
নতুন নিয়ম অনুসারে, নির্বাচনের এক সপ্তাহ পূর্বে যে কোনো বৈধ সাংবাদিক ইসি সচিবালয় বা সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে আবেদন করলেই সাংবাদিক পাস কার্ড, গাড়ি ও মোটরসাইকেলের স্টিকার পাবেন। নির্বাচনে কাজ করার জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি এই নীতিমালার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা গত নির্বাচনে ছিল না এবং এতে গণমাধ্যমকর্মীদের চলাচলে নতুন মাত্রা যোগ হবে।
এই নীতিমালা মূলত বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করা সাংবাদিকদের জন্য প্রযোজ্য হবে। এর আওতায় রয়েছে প্রিন্ট মিডিয়া, টেলিভিশন চ্যানেল, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, আইপিটিভি (ইন্টারনেট প্রোটোকল টেলিভিশন), ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এবং বিদেশি সাংবাদিকরা। তাদের প্রত্যেককে যথাযথ অনুমোদিত কার্ড ও স্টিকার দেয়া হবে যাতে তারা নির্বিঘ্নে নির্বাচনকালীন সংবাদ পরিবেশন করতে পারেন।
নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের করণীয় ও নিষিদ্ধ কার্যাবলী সংক্রান্ত বিস্তারিত নির্দেশনা নিম্নরূপ –
১. নির্বাচনী দিনে বৈধ কার্ডধারী সাংবাদিক ভোটকেন্দ্রে সরাসরি প্রবেশের অনুমতি পাবেন। তবে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর তাদের অবশ্যই প্রিসাইডিং অফিসারকে অবহিত করতে হবে এবং তাঁর অনুমতি নিয়ে তথ্য, ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করতে হবে।
২. গোপন কক্ষে, যেখানে ভোটগ্রহণের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য কার্যক্রম চলছে, সেখানে কোনো ছবি তোলা বা ভিডিও গ্রহণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
৩. একসঙ্গে কোনো ভোটকেন্দ্রে দুইটির বেশি সাংবাদিক একই প্রতিষ্ঠানের হয়ে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। এ নিয়ম পুরো নির্বাচনকালীন সময় কঠোরভাবে পালন করতে হবে।
৪. ভোটকক্ষে একবারে ১০ মিনিটের বেশি সময় থাকার অনুমতি নেই। এতে ভোটগ্রহণে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে এই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
৫. ভোটকক্ষে কোনো রকম সাক্ষাৎকার নেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ এতে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাব পড়তে পারে।
৬. ভোটকক্ষ থেকে সরাসরি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা টেলিভিশনে সম্প্রচার করা যাবে না। তবে ভোটকেন্দ্র থেকে নিরাপদ দূরত্ব থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে।
৭. ভোট গণনার সময় ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকতে পারবেন এবং ছবি তোলা যাবে। কিন্তু সরাসরি ভোটকেন্দ্র থেকে কোনো সম্প্রচার করা যাবে না।
৮. সাংবাদিকরা যাতায়াতে ইসি কর্তৃক প্রদত্ত গাড়ি ও মোটরসাইকেল স্টিকার ব্যবহার করবেন। মোটরসাইকেল ব্যবহার নির্বাচনে সংবাদ সংগ্রহের গতিশীলতা বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, এই নীতিমালা গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপদ ও স্বচ্ছ সংবাদ পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণা ও ভোটগ্রহণের সময় সাংবাদিকরা যাতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তাই এই বিস্তারিত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা চাই সাংবাদিকেরা ভোটের দিন নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করে জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হোন।’
এই নতুন নীতিমালা ভোটের দিন সাংবাদিকদের যাতায়াত ও কাজের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। বিশেষ করে মোটরসাইকেল ব্যবহার ও ভোটকেন্দ্র থেকে সরাসরি সম্প্রচারের অনুমতি অনেকেই ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন। তবে গোপনীয়তা ও নির্বাচনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ভোটকক্ষে সরাসরি সম্প্রচার নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে, যা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এছাড়া, স্থানীয় সরকারের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্যও এই নীতিমালা প্রযোজ্য থাকায় দেশের সমস্ত নির্বাচনী পর্যায়ে সাংবাদিকতার জন্য একটি সার্বজনীন কাঠামো তৈরি হলো।
গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল অংশীদারদের প্রতি নির্বাচন কমিশন আহ্বান জানিয়েছে, তারা এই নীতিমালা মেনে নির্বাচন পরিচালনায় অংশগ্রহণ করবেন এবং জনগণের কাছে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পৌঁছে দেবেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের এই সহযোগিতামূলক ও সংগঠিত পন্থা নিশ্চিত করবে আগামী জাতীয় নির্বাচন ও অন্যান্য নির্বাচনে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ সংবাদ পরিবেশ, যা একটি গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য অপরিহার্য।
বাংলাবার্তা/এমএইচ