
ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ায় ভয়াবহ এক বিমান দুর্ঘটনায় অ্যান্টোনভ-২৪ (An-24) মডেলের একটি যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়ে সকল আরোহী নিহত হয়েছেন। রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় আমুর অঞ্চলে দুর্ঘটনার শিকার হওয়া বিমানটির ধ্বংসাবশেষ বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) শনাক্ত করা হয়। বিমানটির সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর থেকে ব্যাপক অনুসন্ধান অভিযান চালানো হয়। রাশিয়ার জরুরি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, ধ্বংসাবশেষে জীবিত কোনো আরোহীর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
দুর্ঘটনার পরপরই রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা সংস্থার এমআই-৮ মডেলের হেলিকপ্টার দিয়ে ঘটনাস্থলের ওপর থেকে পর্যবেক্ষণ চালানো হয়। হেলিকপ্টার ক্রুরা নিশ্চিত করেন, বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসস্তূপের আশপাশে জীবনের কোনো চিহ্ন নেই। পরে উদ্ধারকর্মীরা হেলিকপ্টার থেকে নামার পর আগুনে পুড়ে যাওয়া বিমানটির আশপাশে তল্লাশি চালিয়ে জানান, আরোহীদের সবাই নিহত হয়েছেন।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস (TASS) এর খবরে বলা হয়, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই আগুন ধরে যায়। আঞ্চলিক বেসামরিক প্রতিরক্ষা ও অগ্নিনিরাপত্তা কেন্দ্র থেকে জানানো হয়, আগুনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে উদ্ধারকারীদের ঘটনাস্থলে পৌঁছাতেও সময় লেগেছে এবং ততক্ষণে আর কিছুই বাঁচানো সম্ভব ছিল না।
জানা গেছে, বিমানটি রাশিয়ার সাইবেরিয়াভিত্তিক বেসরকারি বিমান সংস্থা এনগারা এয়ারলাইন্স পরিচালনা করছিল। চীনের সীমান্তবর্তী আমুর অঞ্চলের টিন্ডা শহরের দিকে যাওয়ার পথে মাঝ আকাশে এটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই এটিকে নিখোঁজ ঘোষণা করা হয়।
রাশিয়ার স্থানীয় সময় সকাল থেকেই আবহাওয়া ছিল প্রতিকূল। এরই মধ্যে বিমানটি উড্ডয়ন করেছিল। তবে এখনো স্পষ্টভাবে জানা যায়নি, দুর্ঘটনার কারণ প্রযুক্তিগত ত্রুটি, আবহাওয়ার প্রতিকূলতা, না কি পাইলট ত্রুটি।
প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে আমুর অঞ্চলের গভর্নর ভ্যাসিলি অরলভ জানিয়েছেন, বিধ্বস্ত বিমানটিতে ৪৩ জন যাত্রী এবং ৬ জন ক্রু ছিলেন। যাত্রীদের মধ্যে পাঁচজন শিশু ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। গভর্নর বলেন, “এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে সকল ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।”
রাশিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (Rosaviatsiya) এবং তদন্ত সংস্থা Interstate Aviation Committee (MAK) ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। প্রাথমিকভাবে ব্ল্যাক বক্স উদ্ধারের চেষ্টা চলছে, যা থেকে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
দেশটির জরুরি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিমানটির ধ্বংসাবশেষ পাহাড়ি ও ঘন জঙ্গলাবৃত একটি দুর্গম অঞ্চলে পাওয়া গেছে, যা উদ্ধার কাজকে আরও কঠিন করে তুলছে। বিমানে আগুন ধরে যাওয়ার কারণে অনেক যাত্রীর মরদেহ শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলেও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বিমানটির মালিক এনগারা এয়ারলাইন্স অতীতে তুলনামূলক নিরাপদ রেকর্ড বজায় রাখলেও ২০১৯ সালেও প্রতিষ্ঠানটির একটি অ্যান-২৪ বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল, যাতে পাইলটসহ কয়েকজন নিহত হন। অ্যান্টোনভ-২৪ মডেলের বিমানগুলো মূলত পুরনো ধরনের, যা ১৯৫০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নে তৈরি হয়েছিল। এগুলোকে রাশিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাঝারি দূরত্বে যাত্রী পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসব বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিমান বিধ্বস্তের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাশিয়ায় জাতীয় শোক ঘোষণা না হলেও, স্থানীয় সরকার পর্যায়ে শোক প্রকাশ করা হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও এই দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে। চীনের সীমান্তবর্তী হওয়ায় দেশটির কর্তৃপক্ষও উদ্ধার কাজে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে।
রাশিয়ার আকাশে আবারও এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটল। যাত্রী ও শিশুদের মৃত্যু গোটা দেশজুড়ে শোকের ছায়া ফেলেছে। এই দুর্ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছে, পুরনো ও বারবার মেরামতকৃত বিমানগুলো নিয়ে নিরাপত্তা ইস্যুতে আরও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজনীয়তা কতটা জরুরি। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যাবে না, তবে এই ঘটনার পর রাশিয়ায় অভ্যন্তরীণ বিমান পরিচালনা ব্যবস্থা ও বিমানগুলোর মান নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ