
ছবি: সংগৃহীত
গাজা অঞ্চলে ব্যাপক মাত্রায় অনাহার ও খাদ্য সংকটের বিষয়ে সতর্ক করেছে একশোরও বেশি আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সাহায্য সংস্থা। সেভ দ্য চিলড্রেন, মেডেসিনস স্যান্স ফ্রন্টিয়ের্স (এমএসএফ) সহ আরও বিভিন্ন সংগঠন একসঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে অভিযোগ করেছেন, ইসরাইল গাজার ভিতরে ত্রাণ ও খাদ্য বিতরণ বাধাগ্রস্ত করছে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা মানুষ পর্যন্ত পৌঁছাতে দিচ্ছে না।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ফিলিস্তিনিরা এখন এক ভয়াবহ ও হতাশাজনক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। তারা সহযোগিতা ও যুদ্ধবিরতির প্রতীক্ষায় রয়েছেন, তবে অবস্থা দিনদিন আরও খারাপ হচ্ছে। মানুষের জীবিকা ও জীবন রক্ষার জন্য অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য ও ওষুধ দ্রুত পৌঁছে দিতে না পারায় অনাহার ও স্বাস্থ্যঝুঁকি ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে।
ইসরাইল সরকার স্বীকার করেছে যে গাজার মধ্যে সরবরাহের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবে তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গাজায় পর্যাপ্ত খাদ্য আছে, কিন্তু ত্রাণ সংস্থাগুলো তা যথাযথভাবে বিতরণ করতে পারছে না। এই বিবৃতি আলোচনাকে আরও জটিল করেছে।
সাহায্য সংস্থাগুলোর যৌথ চিঠিতে বলা হয়েছে, গাজার জন্য বর্তমানে দিনে মাত্র ২৮টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করছে। যা জাতিসংঘের ন্যূনতম দাবিকৃত দৈনিক ৬০০টির তুলনায় অত্যন্ত কম। এ কারণে অপর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ ও বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যে অনাহার ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) জানিয়েছে, বর্তমানে গাজায় মোট ৯৫০টি ত্রাণবাহী ট্রাক রয়েছে এবং তারা আশা প্রকাশ করেছে যে সাহায্য সংস্থাগুলো এই সরবরাহগুলো দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে। তবে বাস্তবে এটি কীভাবে ও কত দ্রুত সম্ভব হচ্ছে, সে বিষয়ে পরিষ্কার কিছু জানা যায়নি।
সাহায্য সংস্থাগুলো সতর্ক করেছেন, যুদ্ধ ও অবরোধের এই দীর্ঘসময় ধরে খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত থাকলে গাজা অঞ্চলের মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে। শিশুসহ সকল বয়সের মানুষ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই অবিলম্বে ত্রাণ সরবরাহ সুনিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের ত্রাণ কার্যক্রমকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে এবং গাজার মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছে দিতে বাধা দিচ্ছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনার আগে এই মানবিক সংকট সমাধানে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
গাজা পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম ও রাষ্ট্র নেতারা ত্রাণ কার্যক্রম অবরুদ্ধের বিষয়টি তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং সরাসরি ইসরাইল ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পক্ষকে এই অবরোধ শিথিল করার আহ্বান জানাচ্ছেন।
এই মুহূর্তে গাজায় মানবিক সংকটের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে, আর সহযোগিতার অপেক্ষায় থাকা সাধারণ মানুষদের জীবন ঝুঁকির মুখে রয়েছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা ও সংলাপ ছাড়া এই সংকট দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ