
ছবি: সংগৃহীত
বিগত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) পরিচালিত ইপিজেড ও বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পণ্য রপ্তানি ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। এ সময়ে পণ্য রপ্তানিতে ১৬ দশমিক ২২ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং ৩৩ হাজারেরও বেশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিনিয়োগ বাড়ানোর সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।
আলোচিত অর্থবছরে বেপজাধীন জোনসমূহ থেকে ৮ দশমিক ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছর ৭ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলনায় ১৬ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের মোট রপ্তানির মধ্যে বেপজার অবদান ছিল ১৭ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ১৫ দশমিক ৯ শতাংশের কম।
বেপজা প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোট ১১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। ইপিজেডে উৎপাদিত পণ্য বিশ্বের ১২০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। দেশের অর্থনীতিতে বেপজার এই অবদান দেশের রপ্তানি খাতের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও বেপজা জোনসমূহে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ৮টি ইপিজেড এবং বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে মোট ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৫২৭ জন বাংলাদেশি নাগরিক কর্মরত রয়েছেন, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ৫ লাখ ১১০ জন। নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু ও বিদ্যমান শিল্পের সম্প্রসারণের ফলে এই কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে।
অর্থবছরে বেপজাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ মূলধনী যন্ত্রপাতি, নির্মাণ সামগ্রী এবং অন্যান্য সম্পদে (চলতি মূলধন ব্যতীত) ২৯২ দশমিক ৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যদিও আগের অর্থবছরে বিনিয়োগ ছিল ৩৫০ দশমিক ৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বেপজা এই হ্রাসকে বৈশ্বিক ও স্থানীয় অভিযোজন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিবেচনা করছে। তবে চলমান নতুন লিজ চুক্তির ভিত্তিতে আগামী প্রান্তিকগুলোতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে বলে তারা আশাবাদী।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেপজার সঙ্গে ৩৩টি নতুন বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। চুক্তিগুলোতে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা অংশ নিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো মোট ৪৯৭ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে এবং প্রায় ৫৯ হাজার ৪০৮ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
নতুন ও সম্প্রসারিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো পোশাক, ইলেকট্রনিক্স, কৃষি-প্রক্রিয়াজাতকরণ, জুতা, চামড়াজাত, প্যাকেজিং, তাঁবু, পরচুলা, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, খেলনা ও কম্পোজিটসহ বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদন করবে।
বর্তমানে বেপজাধীন জোনসমূহে মোট ৫৬৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যার মধ্যে ৪৫০টি প্রতিষ্ঠান কার্যকর রয়েছে এবং ১১৩টি প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়নাধীন। চালু শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৩৩ শতাংশ তৈরি পোশাক, ১৮ শতাংশ গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ এবং ৯ শতাংশ টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করে। বাকি ৪০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রনিক্স, চিকিৎসা সরঞ্জাম, আসবাবপত্র, ফ্যাশন এক্সেসরিজসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত।
বেপজা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ৮টি ইপিজেড ও চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিচালনা করছে। পাশাপাশি যশোর ও পটুয়াখালীতে আরও দুটি ইপিজেড স্থাপনের কাজ চলছে, যা ভবিষ্যতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
বেপজার এই সফলতা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি সম্ভাবনা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা আশা করছে, নতুন বিনিয়োগ ও শিল্প সম্প্রসারণের মাধ্যমে বেপজা দেশের শিল্প খাতকে আরও শক্তিশালী করবে এবং বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরো দৃঢ় করবে।
সুত্র: বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)
বাংলাবার্তা/এমএইচ