
ছবি: সংগৃহীত
নাটোরের গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম সীমান্তে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের সাত সদস্যসহ মোট আটজন নিহত হয়েছেন। বুধবার সকাল ১০টার দিকে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের আইড়মারী এলাকায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দ্রুতগামী একটি ট্রাক ও বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের ফলে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন মারা যান। গুরুতর আহত অবস্থায় বাকি আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও তিনজনের মৃত্যু হয়।
নিহতদের মধ্যে ছয়জন নারী এবং একজন পুরুষ একই পরিবারের সদস্য। তারা হলেন— ইতি খাতুন (৪০), জাহিদুল ইসলাম (৬৫), সেলি বেগম (৬০), আঞ্জুমানয়ারা (৭৫), আন্না খাতুন (৬০), আনু বেগম (৫৫) ও সীমা খাতুন (৩৫)। তাদের মধ্যে সীমা খাতুনের বাড়ি মেহেরপুর জেলার কুষ্টিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় হলেও বাকিদের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের ধর্মদহ গ্রামে। এছাড়া নিহত হয়েছেন মাইক্রোবাসচালক সাহাবুদ্দিন (৩৫)।
দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে বনপাড়া হাইওয়ে পুলিশ, নাটোর ফায়ার সার্ভিস এবং গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রামের জরুরি সেবা টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে, সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। পরে দুর্ঘটনাকবলিত যান দুটি সরিয়ে ও মরদেহ উদ্ধার করে বনপাড়া হাইওয়ে থানায় নেওয়া হলে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
বনপাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মেহেরপুর থেকে ঢাকাগামী একটি মাইক্রোবাস বনপাড়া হয়ে হাটিকুমরুলের দিকে যাচ্ছিল। পথে বড়াইগ্রামের আইড়মারী এলাকার তরমুজ পাম্পের সামনে এসে মাইক্রোবাসটি একটি ধীরগতির গাড়িকে ওভারটেক করার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা সিমেন্টবোঝাই একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে পড়ে। প্রচণ্ড ধাক্কায় মাইক্রোবাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়, যাত্রীদের অধিকাংশ ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, “আমি রাস্তার পাশেই ছিলাম। হঠাৎ করে বিকট শব্দ শুনে ছুটে যাই। দেখি একটি মাইক্রোবাসের সামনের অংশ একেবারে চেপে গেছে, লোকজনের চিৎকারে পুরো এলাকা ভারী হয়ে ওঠে। কয়েকজনকে ঘটনাস্থলেই নিস্তেজ পড়ে থাকতে দেখি।”
তিনি আরও জানান, মাইক্রোবাসটি ওভারটেক করার সময় অসাবধানতাবশত মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। “এক মুহূর্তেই ছয়টি জীবন নিভে গেল। এমন দৃশ্য আমি জীবনে কখনও দেখিনি,” বলেন মিজানুর।
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, মাইক্রোবাসটি কুষ্টিয়া থেকে বনপাড়া হয়ে সিরাজগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। পথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনের দিক থেকে আসা ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। তবে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে তদন্ত শুরু করেছে বনপাড়া হাইওয়ে থানা পুলিশ।
একই পরিবারের সাতজনের মৃত্যুতে কুষ্টিয়ার ধর্মদহ গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও জনপ্রতিনিধিরা শোকাহত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ