
ছবি: সংগৃহীত
মঙ্গলবার (১০ জুন) সন্ধ্যায় ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর। এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচ ঘিরে ফুটবলপ্রেমীদের মাঝে প্রবল উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন পর আন্তর্জাতিক একটি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ায় হাজারো দর্শক মাঠে বসে প্রিয় দলের খেলা দেখতে উদগ্রীব। তবে ম্যাচ আয়োজন নির্বিঘ্ন ও সুশৃঙ্খল করতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।
সোমবার (৯ জুন) সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাফুফে দর্শকদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা ও সতর্কতা প্রকাশ করেছে, যা মাঠে আসা প্রত্যেক দর্শকের অনুসরণ আবশ্যক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাফুফে জানায়, স্টেডিয়ামের মূল ফটকসহ সকল প্রবেশপথ খোলা হবে মঙ্গলবার দুপুর ২টায়। দর্শকদের আগেভাগেই এসে লাইনে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে প্রবেশ প্রক্রিয়া সহজ হয় এবং অযথা ভিড় বা বিশৃঙ্খলা না ঘটে।
সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা হলো—যাদের টিকিট নেই, তারা যেনো কোনোভাবেই স্টেডিয়ামে প্রবেশের চেষ্টা না করেন। এমনকি গেট এলাকাতেও যেন জটলা না হয়, সে বিষয়ে কড়া মনোভাব গ্রহণ করেছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। বাফুফে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, "টিকিট ছাড়া স্টেডিয়ামে ঢোকার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।"
এছাড়া দর্শকদের অনুরোধ করা হয়েছে কোনো প্রকার ব্যাগ, বোতল, ঝুঁকিপূর্ণ বস্তু বা অতিরিক্ত সামগ্রী নিয়ে স্টেডিয়ামে না আসার জন্য। এতে খেলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে বলে জানানো হয়।
প্রতিটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের মতো এবারের ম্যাচেও কালোবাজারিদের তৎপরতা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। বাফুফে ইতোমধ্যে জানিয়েছে, টিকিট জাল, অতিরিক্ত দামে বিক্রি কিংবা অন্য কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই পরিস্থিতি মাথায় রেখে বাফুফে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে স্টেডিয়াম এবং আশপাশের এলাকায় বিশেষ নজরদারি করবে। দর্শকদেরও অনুরোধ করা হয়েছে, তারা যেন শুধু নির্ধারিত বিক্রয়কেন্দ্র বা অনলাইনের নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম থেকে টিকিট সংগ্রহ করেন।
যারা মাঠে গিয়ে খেলা দেখতে পারছেন না, তাদের জন্যও রয়েছে বিকল্প ব্যবস্থা। ঢাকার রবীন্দ্র সরোবরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বড় পর্দায় ম্যাচটি দেখানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাফুফে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সারা দেশের হাজারো সমর্থক যেন খেলাটির রোমাঞ্চ উপভোগ করতে পারেন, সেটাই মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
জাতীয় স্টেডিয়ামের তিন নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশের জন্য আলাদা দুটি লেন নির্ধারণ করা হয়েছে। একটি লেনে সাধারণ দর্শকরা লাইনে দাঁড়িয়ে প্রবেশ করবেন, আরেকটি লেনে চলবে যানবাহন। প্রতিটি প্রবেশপথে বাফুফের স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও দায়িত্বে থাকবেন।
বিশেষত দৈনিক বাংলা মোড় এবং রাজউক এলাকা থেকে যারা প্রবেশ করবেন তাদের জন্য আলাদা প্রবেশপথ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। জনসমাগম বেশি হলে পুলিশের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও ব্যারিকেড বসানোর সিদ্ধান্তও প্রস্তুত রয়েছে।
দর্শকদের জন্য স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত খাবার ও পানীয় কেনার কোনো সুস্পষ্ট ব্যবস্থা রাখা হয়েছে কিনা—সে বিষয়ে এখনো কিছু জানায়নি বাফুফে। ফলে যারা দুপুরে মাঠে প্রবেশ করবেন তাদের দীর্ঘ সময় মাঠেই অবস্থান করতে হবে। এই অবস্থায় নিজ দায়িত্বে হালকা কিছু খাবার বা পানীয় সঙ্গে আনার সুযোগ থাকলেও নিরাপত্তার কারণে তা পরীক্ষা করে দেখা হতে পারে।
ম্যাচ শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেলেও, জেফার বা অন্য গায়কদের গান গাওয়ার সময়সূচি বা উপস্থিতি নিয়ে বাফুফের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কিছু জানানো হয়নি। ম্যাচ শুরুর আগে যদি এমন আয়োজন থাকে, তা দর্শকদের জন্য বাড়তি বিনোদনের উৎস হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচটি শেষ হবে রাত ৯টার দিকে। সন্ধ্যা নামার পর শহরের ব্যস্ত এলাকায় যানজট তৈরি হওয়ায় ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থার প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানা গেছে। স্টেডিয়াম এলাকা ও আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হবে, যাতে দর্শকদের যাতায়াতে কোনো অসুবিধা না হয়।
জাতীয় স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন সবসময়ই বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচে যেমন রয়েছে ফুটবলপ্রেমীদের আবেগ, তেমনি রয়েছে নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ। বাফুফে ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চললে দর্শকরা এই ম্যাচ নিরাপদ ও উপভোগ্যভাবে উপভোগ করতে পারবেন।
দর্শকদের অনুরোধ করা হচ্ছে—মাঠে প্রবেশ, বসা ও খেলা উপভোগের সময় যেনো সহযোগিতার মনোভাব বজায় থাকে এবং নিয়মনীতি মানা হয়—এটাই একটি সফল আন্তর্জাতিক ম্যাচের প্রধান শর্ত।
বাংলাবার্তা/এমএইচ