
ছবি: সংগৃহীত
ইউরোপীয় ফুটবলের মর্যাদাপূর্ণ টুর্নামেন্ট উয়েফা নেশন্স লিগের এবারের ফাইনাল ম্যাচে দর্শকরা পেয়েছে এক রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তা, যেখানে ফিফা র্যাংকিংয়ের দুই পরাশক্তি স্পেন ও পর্তুগাল মুখোমুখি হয়ে সৃষ্টি করেছে স্মরণীয় এক লড়াই। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উত্তেজনা ছড়ানো এই ম্যাচ শেষ পর্যন্ত গড়ায় টাইব্রেকারে, যেখানে ভাগ্য সহায় ছিল পর্তুগালের। শুটআউটে ৫-৩ ব্যবধানে স্পেনকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো নেশন্স লিগের শিরোপা ঘরে তোলে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দল।
ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠে ফাইনাল। দুই দলের মাঝমাঠের লড়াই যেমন তীব্র ছিল, তেমনি রক্ষণভাগও ছিল বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ম্যাচের ২১তম মিনিটে স্পেন প্রথম গোলের দেখা পায়। একটি লুজ বল পেয়ে ডান পায়ের নিখুঁত শটে পর্তুগিজ গোলরক্ষক দিয়েগো কস্তাকে পরাস্ত করেন মার্টন জুবিমেন্দি।
তবে স্পেনের এই আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। মাত্র পাঁচ মিনিট পরেই পর্তুগাল ম্যাচে সমতা ফেরায়। ২৬ মিনিটে পেদ্রো নেতোর কাছ থেকে বল পেয়ে বাঁ দিক থেকে দুর্দান্ত এক শটে গোল করেন নুনো মেন্ডেজ। ডিফেন্ডারদের চাপে থেকেও অসাধারণ দক্ষতায় শটটি নেন তিনি, যা স্পেনের গোলরক্ষককে বিস্মিত করে জাল ছুঁয়ে যায়।
প্রথমার্ধের শেষ বাঁশি বাজার আগেই আবারো এগিয়ে যায় স্পেন। ৪৫তম মিনিটে গোল করেন মিকেল ওইয়ারজাবাল। ডান প্রান্ত থেকে লামিনে ইয়ামালের নিখুঁত পাস পেয়ে পেদ্রি বলটি আলতো ছুঁয়ে পাঠিয়ে দেন ওইয়ারজাবালের কাছে। আর সেখান থেকে দুর্দান্ত এক ফিনিশিংয়ে আবারও পর্তুগালের জালে বল পাঠিয়ে স্পেনকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন তিনি।
দ্বিতীয়ার্ধে স্পেন কিছুটা রক্ষণাত্মক খেললেও বারবার চেষ্টা করে গেছে ব্যবধান বাড়ানোর। তবে ৬১ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে ম্যাচে ফেরে পর্তুগাল। বাঁদিক থেকে মেন্ডেজের এক দৃষ্টিনন্দন ক্রস লক্ষ্যভেদ করার মতো ছিল না, কিন্তু তা দিক বদলে পৌঁছে যায় রোনালদোর সামনে। কাছ থেকে নেওয়া ভলির শট কোন সুযোগ না দিয়ে স্পেনের জালে বল পাঠিয়ে দেন তিনি। এই গোলটি ছিল রোনালদোর ১৩৮তম আন্তর্জাতিক গোল, যা তাকে আরও একধাপ এগিয়ে দিল আন্তর্জাতিক ফুটবলের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায়।
পরবর্তী সময়ে দুই দলই বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করলেও আর গোলের দেখা মেলেনি। ৯০ মিনিটের খেলা শেষ হয় ২-২ সমতায়। অতিরিক্ত সময়েও কোনো দল গোল করতে না পারায় খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।
টাইব্রেকারে দুই দলের খেলোয়াড়রাই যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস নিয়ে শট নেন। প্রথম চারটি শট শেষে উভয় দলই তিনটি করে গোল করে। তবে ম্যাচের মোড় ঘুরে যায় স্পেন অধিনায়ক আলভারো মোরাতার শট মিস করার মধ্য দিয়ে। তার নেওয়া চতুর্থ শটটি প্রতিহত করেন পর্তুগালের গোলরক্ষক দিয়েগো কস্তা, যিনি হয়ে ওঠেন পর্তুগালের বিজয়ের নায়ক।
পর্তুগালের হয়ে শেষ শট নিতে আসেন রুবেন নেভেস। তার নেওয়া নিখুঁত শট স্পেনের জালে জড়াতেই শুরু হয়ে যায় বিজয়ের উদযাপন। ৫-৩ গোল ব্যবধানে টাইব্রেকার জিতে নেশন্স লিগের শিরোপা দ্বিতীয়বারের মতো নিজের করে নেয় পর্তুগাল।
টাইব্রেকার ফলাফল বিশ্লেষণ:
দল শট নেওয়া গোল সংখ্যা মিস
পর্তুগাল ৫ ৫ ০
স্পেন ৫ ৩ ১
শুটআউটে গোলদাতারা:
পর্তুগাল: গনকালো রামোস, ভিতিনহা, ব্রুনো ফার্নান্দেজ, নুনো মেন্ডেজ, রুবেন নেভেস
স্পেন: মাইকেল মেরিনো, অ্যালেক্স বায়েনা, ইসকো
মিস: আলভারো মোরাতা (স্পেন)
এই জয় শুধু পর্তুগালের জন্যই নয়, রোনালদোর জন্যও বড় এক অর্জন। ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো নেশন্স লিগ জয়ের পর এবার দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হলো পর্তুগাল। ইউরোপিয়ান ফুটবলের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কেবল পর্তুগালই দুইবার নেশন্স লিগ জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করল।
আর এই জয়ের পেছনে গোলরক্ষক দিয়েগো কস্তার অসাধারণ ভূমিকা ভুলে যাওয়ার নয়। ম্যাচজুড়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সেভের পাশাপাশি টাইব্রেকারে স্পেন অধিনায়কের শট ঠেকিয়ে হয়ে উঠেছেন নায়ক।
যেমনটি প্রত্যাশা করা হয়েছিল, তেমনই হয়েছিল এই ফাইনাল। নাটকীয়তায় ভরা, গতি-ছন্দে সমৃদ্ধ এবং তারকাদের ঝলকে উজ্জ্বল। শেষ পর্যন্ত ভাগ্য, দক্ষতা ও মনোবলের পরীক্ষায় সফল হয়েছে পর্তুগাল। ইউরোপের ফুটবল ইতিহাসে তারা আরেকটি স্মরণীয় অধ্যায় লিখল এই রোমাঞ্চকর রাতে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ