
ছবি: সংগৃহীত
সারা দেশে গরমে অতিষ্ঠ জনজীবনে স্বস্তির আশার আলো দেখিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। জুনের শুরুতেই রাজধানীসহ দেশের একাধিক অঞ্চলে তীব্র ভ্যাপসা গরমে জনজীবন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। দেশের ৩৬টি জেলার ওপর দিয়ে এখন মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় বৃষ্টির খবর যেন মরুর মাঝে পানির আশ্বাস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে, দেশের ফরিদপুর, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, চাঁদপুর, ফেনী ও পটুয়াখালী জেলাসহ রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ এবং খুলনা বিভাগজুড়ে তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে। এসব অঞ্চলে বর্তমানে মৃদু তাপদাহ চলছে, যা আগামী আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে।
বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় গরমের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে বেশি অনুভূত হচ্ছে। যদিও দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেনি, তবে বাতাসে আর্দ্রতা অনেক বেশি থাকায় শরীরে অতিরিক্ত গরম লাগছে। আবহাওয়াবিদরা জানান, মঙ্গলবার (১০ জুন) সকাল ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৯০ শতাংশ। এর ফলে ঘাম শুকাচ্ছে না, শরীরে ভারী ভাব তৈরি হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগজনক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাতাসে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি বেড়ে গেলে মানুষের দেহ স্বাভাবিকভাবে তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে শরীরে অতিরিক্ত গরম অনুভূত হয়। এই অবস্থায় শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থদের জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এই ভ্যাপসা গরমের মধ্যে কিছুটা স্বস্তির খবর দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সংস্থাটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি সপ্তাহের শেষভাগে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) থেকে শুক্রবার (১৪ জুন) পর্যন্ত ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়াও দেশের কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াও বইতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। স্থানীয়ভাবে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি বৃষ্টিপাতও হতে পারে। যদি এসব বৃষ্টি হয়, তাহলে সারা দেশে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমে আসবে এবং স্বস্তি ফিরবে জনজীবনে।
আবহাওয়াবিদরা আরও জানান, আগামী কয়েক দিনের আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি নির্ভর করবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ বা লঘুচাপের অবস্থান ও শক্তির ওপর। এখন পর্যন্ত সমুদ্রপৃষ্ঠে কোন উল্লেখযোগ্য নিম্নচাপ তৈরি না হলেও, আর্দ্রতার আধিক্য এবং মৌসুমি বায়ুর অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, টানা কয়েকদিনের এই গরমে শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। যার ফলে অনেক এলাকায় লোডশেডিং বেড়েছে এবং গরমে অতিষ্ঠ মানুষজন বিদ্যুৎহীন অবস্থায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল কমে গেছে। কৃষিকাজ, নির্মাণশিল্প, দিনমজুরি এমনকি ছোট ব্যবসাও গরমের কারণে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে বৃষ্টি যেন মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত আশীর্বাদ হয়ে আসবে। বিশেষ করে কৃষিজমিতে আর্দ্রতা ফেরাতে এবং বীজ রোপণের পূর্ব প্রস্তুতির জন্যও এই বৃষ্টি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
সবমিলিয়ে, চলতি সপ্তাহের শেষদিকে সম্ভাব্য বৃষ্টির মাধ্যমে দেশের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে বলেই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আবহাওয়া সংশ্লিষ্টরা। তবে সেই সঙ্গে বজ্রপাত ও হঠাৎ ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনাও থাকায় সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
সর্বশেষ পরিস্থিতির জন্য আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট ও গণমাধ্যমে নিয়মিত চোখ রাখার অনুরোধ করা হয়েছে জনসাধারণের প্রতি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ