
ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি ইসরায়েল সরকার পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার কর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ একদল কর্মীকে মুক্তি দিয়ে তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। দীর্ঘ দিনের উত্তেজনার পর অবশেষে থুনবার্গ ইসরায়েল ছেড়ে সুইডেনের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সূত্র: এএফপি।
মঙ্গলবার ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানায়, গ্রেটা থুনবার্গ ফ্রান্স হয়ে সুইডেনের উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করেছেন। তিনি সহ নৌযাত্রায় থাকা মোট ১২ জন মানবাধিকার কর্মীকে গত কয়েকদিন ধরে ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ আটক করে রেখেছিল। ওই নৌযাত্রাটি ছিল গাজা উপত্যকার ওপর চলমান ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে সেখানে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে ইসরায়েলি নৌবাহিনীর দ্বারা আটক করা হয়েছিল।
গ্রেটা থুনবার্গ ছাড়াও এই কর্মী দলে ছিলেন বিভিন্ন দেশের নাগরিক। এদের মধ্যে ফরাসি, জার্মান, ব্রাজিলিয়ান, তুর্কি, সুইডিশ, স্প্যানিশ ও ডাচ নাগরিক রয়েছেন। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জান-নোয়েল ব্যারো জানিয়েছেন, জাহাজটিতে থাকা ফরাসি নাগরিকদের মধ্যে একজন স্বেচ্ছায় ইসরায়েল ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তিনি আজই দেশে ফিরে যাবেন। অন্য পাঁচজনকে অবশ্য আদালতের মুখোমুখি হতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক বহিষ্কারের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ভোরে ওই মানবাধিকার কর্মী দল বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে যারা বহিষ্কারের নথিপত্রে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানাবে, তাদেরকে ইসরায়েলি আদালতের সামনে হাজির করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজা উপত্যকার ওপর ইসরায়েলি অবরোধ এবং সেখানে মানবিক সংকট বেড়ে যাওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এই অবস্থায় একটি ত্রাণবাহী নৌযাত্রা গাজায় পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে রওনা দিয়েছিল। তবে ইসরায়েলি নৌবাহিনী ওই জাহাজটিকে আটকে দেয়। তৎপরবর্তী সময়ে ত্রাণযাত্রায় থাকা গ্রেটা থুনবার্গসহ অন্যান্য কর্মীদের আটক করে ইসরায়েল।
এই ঘটনাটি বিশ্বজুড়ে সরাসরি পরিবেশ ও মানবাধিকার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত গ্রেটা থুনবার্গের জন্য একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই আটক ও জোরপূর্বক বহিষ্কারের ঘটনা নিয়ে ইসরায়েলের কঠোর সমালোচনা করেছে।
এদিকে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জান-নোয়েল ব্যারোর ভাষ্য থেকে বোঝা যায় যে, ইসরায়েল এই কর্মীদের প্রতি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিরূপ অবস্থান নিয়েও তাদেরকে এক পর্যায়ে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, “একজন স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে যাচ্ছেন, বাকিরা অবশ্য আইনগত প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হবেন।”
জাহাজটিতে থাকা অন্যান্য দেশের নাগরিকদের ব্যাপারে ইসরায়েলি প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং তাদের বহিষ্কার সংক্রান্ত যাবতীয় আইনি কার্যক্রম চালানোর ঘোষণা দিয়েছে।
এই নৌযাত্রার মূল উদ্দেশ্য ছিল গাজার ওপর দীর্ঘদিন ধরে চলমান ইসরায়েলি সামরিক ও বাণিজ্যিক অবরোধ ভেঙে সেখানে জরুরি মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। গাজার জনগণের স্বাস্থ্য ও জীবনমান উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল।
বিশ্বব্যাপী পরিবেশ আন্দোলনের মুখপাত্র গ্রেটা থুনবার্গের অংশগ্রহণ এই মিশনটিকে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। তার অসাম্প্রদায়িক আন্দোলন ও মানবাধিকার রক্ষার প্রচেষ্টা এই ঘটনার মাধ্যমে আরও সমর্থক পেয়েছে।
তবে, ইসরায়েলের কঠোর নিরাপত্তা নীতির কারণে এই ত্রাণবাহী নৌযাত্রাটি বাধাগ্রস্ত হয় এবং কর্মীদের আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া এখনো চলছে।
এই ঘটনায় বিশ্ববাসী আশা করছে, দ্রুতই গাজার সংকট নিরসনে শান্তিপূর্ণ ও মানবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরায়েল এই অবরোধ শিথিল করতে পারে এবং সেখানে মানবিক সংকট লাঘব করা সম্ভব হবে।
সর্বশেষ খবর অনুসারে, গ্রেটা থুনবার্গসহ অন্যান্য মানবাধিকার কর্মীরা তাদের নিজ নিজ দেশে নিরাপদে ফিরে গেছেন। তবে গাজার মানবিক অবস্থা ও সেখানে চলমান সংকট বিশ্ববাসীর জন্য এখনও উদ্বেগের বিষয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই সংকট সমাধানে অব্যাহত চাপ সৃষ্টি করছে।
অতএব, পরিবেশ ও মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই ঘটনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যেখানে ন্যায় ও মানবিক সহানুভূতির প্রতি বিশ্ব দরবারের দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ