
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ব ফুটবলে ‘কে সেরা’ এই প্রশ্নে দুই নাম বহু বছর ধরে চর্চার কেন্দ্রে—লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। এক দশকের বেশি সময় ধরে এই দুই মহাতারকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঘিরে উত্তপ্ত বিতর্ক আর আলোচনা চলেই এসেছে। ফুটবল বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত—কারও চোখে মেসি শ্রেষ্ঠ, কারও মতে রোনালদোই সেরা। কিন্তু এত তর্ক-বিতর্ক, গর্ব আর প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঝেও এই দুই কিংবদন্তির মধ্যে যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা রয়েছে, সেটি আবারও স্পষ্ট করে দিলেন পর্তুগিজ তারকা রোনালদো।
রবিবার, উয়েফা নেশনস লিগে মাঠে নামার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন রোনালদো। স্বাভাবিকভাবেই মেসির প্রসঙ্গ উঠেই যায়। “মেসির সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন?”—এই প্রশ্নের উত্তরে রোনালদো যা বললেন, তা অনেক মেসি-রোনালদো অনুরাগীর হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।
রোনালদো বললেন, “মেসির প্রতি আমার ভালোবাসা আছে। আমরা একে অপরকে শ্রদ্ধা করি। যদিও দীর্ঘদিন আমরা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলাম, কিন্তু সম্পর্কটা সবসময় সম্মানের ভিত্তিতেই দাঁড়িয়ে ছিল। আমরা প্রায় ১৫ বছর ধরে ফুটবলের সর্বোচ্চ মঞ্চে একসঙ্গে লড়েছি। বহু পুরস্কার অনুষ্ঠানে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছি। এমনকি কখনো কখনো ওর হয়ে ইংরেজিতে অনুবাদও করেছি। আমি তাকে শ্রদ্ধা করি কারণ সেও আমাকে শ্রদ্ধা করে।”
সিআর সেভেন আরও বলেন, “মানুষ শুধু আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখে, কিন্তু আমরা ভেতরে ভেতরে একে অপরের প্রতি সদয় মনোভাবই রেখেছি। আমি ওকে শুভকামনা জানাই, এবং আশা করি ওর ক্যারিয়ারের শেষ পর্বটাও হবে দুর্দান্ত।”
এমন আন্তরিক মন্তব্যে যখন মেসির সঙ্গে সম্পর্কের মানবিক দিকটি উঠে আসে, তখন অন্যদিকে সাংবাদিকেরা রোনালদোকে ঘিরে তুলনা করতে শুরু করেন স্পেনের তরুণ প্রতিভা লামিনে ইয়ামালের সঙ্গে। এ নিয়ে রোনালদো স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এসব তুলনায় তিনি খুব একটা গুরুত্ব দেন না।
রোনালদোর কথায়, “প্রতিবারই বড় ম্যাচের আগে শুনি—‘রোনালদো বনাম এই খেলোয়াড়, রোনালদো বনাম ওই খেলোয়াড়।’ এটা আমি ২০ বছর ধরে শুনে আসছি। এখন আর এসব নিয়ে ভাবি না। রাতে ঘুম নষ্ট হয় না আমার। ইয়ামাল দারুণ খেলোয়াড়, তবে আমাদের প্রজন্ম ভিন্ন। আমি যে প্রজন্মের শেষপ্রান্তে, ও নতুন প্রজন্মের সূচনা করছে। বাস্তবতা হচ্ছে, এটা একজন খেলোয়াড়ের বিপক্ষে আরেকজনের লড়াই নয়—এটা দুটি দলের লড়াই।”
তিনি তরুণ ইয়ামালকে নিয়ে আরও বলেন, “ওর বয়স কম, ওকে সময় দিন উন্নতি করার জন্য। ওর মধ্যে সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু আমরা একে অপরের বিকল্প বা প্রতিদ্বন্দ্বী নই।”
এদিকে রোনালদো যখন ক্লাব ফুটবলে সৌদি আরবের আল-নাসরে খেলছেন, তখন তাকে ঘিরে এক চমকপ্রদ খবরও সামনে এসেছে। শোনা যাচ্ছে, ক্লাব বিশ্বকাপে সৌদি ক্লাবটির অংশগ্রহণ না থাকায় অন্যান্য ক্লাবগুলো থেকে প্রস্তাব পেয়েছেন তিনি, এমনকি আর্জেন্টিনার কিছু ক্লাব থেকেও।
এই প্রসঙ্গে রোনালদো নিজেই জানান, “হ্যাঁ, আর্জেন্টিনা থেকে ক্লাব বিশ্বকাপে খেলার প্রস্তাব পেয়েছিলাম। বেশ কিছু ক্লাব আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। যদিও আমি জানিয়ে দিয়েছি, এবারের ক্লাব বিশ্বকাপে আমি খেলছি না। তবে কে জানে ভবিষ্যতে কী হতে পারে? আমি কখনো আর্জেন্টিনা যাইনি, কিন্তু একবার যেতে চাই। মেসির দেশ এবং তার প্রতি আমার অনুরাগ রয়েছে।”
ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোও এর আগে বলেছিলেন, রোনালদোকে ক্লাব বিশ্বকাপে অন্য দলের হয়ে খেলতে দেখা যেতে পারে। তবে রোনালদো নিজেই এই গুঞ্জনে ইতি টেনে স্পষ্ট করে দেন, “আমি ক্লাব বিশ্বকাপে খেলছি না।”
তবে তিনি এটাও স্পষ্ট করেন, তার প্রতি অন্যান্য ক্লাবের আগ্রহ এখনও ফুরায়নি। বলেন, “এখনও অনেক ক্লাব যোগাযোগ করছে, বিশেষ করে আর্জেন্টিনা থেকে। এটা একটা দারুণ দেশ, যার ফুটবল ইতিহাসও গর্ব করার মতো। আমি সেই দেশে যেতে চাই, অভিজ্ঞতা নিতে চাই।”
ফুটবলের ইতিহাসে মেসি ও রোনালদোর নাম চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধু খেলার মাঠেই সীমাবদ্ধ ছিল। মাঠের বাইরে তারা দুজনেই একে অপরকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দিয়ে সম্মানিত করেছেন। সময় বদলেছে, বয়স বেড়েছে, কিন্তু এই দুজনের পারস্পরিক সম্মান আর সম্পর্কটা যেন সময়ের পরীক্ষায় পাশ করে প্রতিনিয়ত আরও দৃঢ় হচ্ছে।
এখন, দুই তারকার ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে, আমরা ফুটবলপ্রেমীরা শুধু এইটুকুই চাই—যে যেমন খেলেছেন, তাকে তেমনভাবেই স্মরণে রাখুক বিশ্ব। মেসি আর রোনালদো—দুজনই ফুটবলের রাজপুত্র, আর তাদের এই বন্ধুত্বপূর্ণ শ্রদ্ধাবোধ বিশ্ব ক্রীড়ার জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ